Skip to main content

কল্পনা কাব্যগ্রন্থের'(4th.Sem) স্বপ্ন কবিতাটি প্রাচীন ভারতের স্বপ্ন প্রয়াণ'-মন্তব্যটির গ্ৰহণযোগ্যতা বিচার করো।

কল্পনা কাব্যগ্রন্থের 'স্বপ্ন কবিতাটি প্রাচীন ভারতের স্বপ্ন প্রয়াণ'-মন্তব্যটির গ্ৰহণযোগ্যতা বিচার করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, বাংলা মেজর)।


             •আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'কল্পনা'কাব্য গ্ৰন্থের অন্তর্গত 'স্বপ্ন' কবিতাটিতে প্রাচীন ভারতের এক স্বপ্নময় চিত্র তুলে ধরেছেন। আর এই প্রেক্ষিতে আমরা প্রদত্ত প্রশ্নের মন্তব্যটির গ্রহণযোগ্যতা বিচার করার জন্য কবিতার বিষয়বস্তু ও রবীন্দ্রনাথের তৎকালীন মানসিকতার দিকে আলোকপাত করা খুবই প্রয়োজন।আর সেখানে আমরা দেখি-

          •'স্বপ্ন' কবিতাটি শুরু হয় কবির এক স্বপ্নলোকের বর্ণনার মধ্যে দিয়ে।যেখানে তিনি শিপ্রানদী-তীরে অবস্থিত প্রাচীন উজ্জয়িনীতে পূর্বজন্মের প্রিয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এই প্রিয়া হলেন কালিদাসের 'মেঘদূত' কাব্যের যক্ষপত্নী।তবে কবি প্রাচীন ভারতের যে চিত্র এঁকেছেন, সেখানে লোধ্ররেণু, কুন্দকলি, কুরুবক, রক্তাম্বর, নূপুর, শঙ্খচক্র অঙ্কিত দ্বার, নীপতরু, কপোত, ময়ূর – এ সবকিছুই প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার এক নিবিড় ও রোমান্টিক দিককে তুলে ধরে। মহাকাল মন্দিরের গম্ভীর মন্ত্র, জনশূন্য পণ্যবীথি, সন্ধ্যারশ্মিরেখা – সব মিলিয়ে যেন এক মায়াবী অতীতের মধ্যে কবি প্রবেশ করেছেন।আর সেখানেই দেখা দিয়েছে-

আলোচ্য মন্তব্যটির গ্রহণযোগ্যতাঃ'স্বপ্ন কবিতাটি প্রাচীন ভারতের স্বপ্ন প্রয়াণ'- এই মন্তব্যটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গ্রহণযোগ্য।এর কারণ-

             ১) অতীতচারিতা ও রোমান্টিকতাঃ রবীন্দ্রনাথ 'কল্পনা' কাব্যের সময়কালে এক ধরনের অতীতচারিতা এবং রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন ছিলেন। তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের গভীরে প্রবেশ করে প্রাচীন ভারতের এক সুদূর স্বপ্নময় রূপকে নিজের কাব্যে ধারণ করতে চেয়েছিলেন। 'স্বপ্ন' কবিতা এই প্রবণতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে তিনি বাস্তবতাকে এড়িয়ে এক কল্পিত, আদর্শায়িত অতীতকে তুলে ধরেছেন, যা তাঁর গভীর প্রেম ও নস্টালজিয়ার প্রকাশ।

              ২)কালিদাসের প্রভাবঃ 'স্বপ্ন' কবিতায় কালিদাসের 'মেঘদূত' কাব্যের স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। যক্ষপত্নীর চিত্রায়ণ, উজ্জয়িনী নগরীর বর্ণনা, শিপ্রা নদীর উল্লেখ – এগুলি সবই কালিদাসের কাব্যের স্মৃতিচারণা। রবীন্দ্রনাথ কালিদাসের কাব্যকে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির এক মহান প্রতীক হিসেবে দেখেছিলেন। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি যেন সেই স্বর্ণযুগের সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এটি কেবল একটি প্রেমের কবিতা নয়, বরং প্রাচীন ভারতের এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতি কবির গভীর অনুরাগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

              ৩)মূল্যবোধের সন্ধানঃ উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে ভারতীয় নবজাগরণের সময়ে রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞান ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটাতে চেয়েছিলেন। 'স্বপ্ন' কবিতায় তিনি পাশ্চাত্যের ভোগবাদ বা বস্তুবাদের বিপরীতে প্রাচীন ভারতের আধ্যাত্মিকতা, সৌন্দর্যবোধ এবং সংবেদনশীলতার এক স্বপ্নময় রূপ তুলে ধরেছেন। এটি ছিল আধুনিকতার কোলাহলের মাঝে দাঁড়িয়ে এক হারানো আদর্শের সন্ধান।

              ৪) স্বপ্ন ও কল্পনাঃ স্বপ্ন কবিতার নামকরণের মধ্যেই 'স্বপ্ন' শব্দটি রয়েছে, যা কবির এই মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।আসলে এটি কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা নয়, বরং বলা যেতে পারে কবির মনের গভীরে প্রোথিত এক স্বপ্নীল জগৎ। প্রাচীন ভারত কবির কাছে শুধুমাত্র একটি অতীত ছিল না, বরং এক অনন্ত সৌন্দর্য ও শান্তিভূমি ছিল, যা তিনি কল্পনার চোখে দেখেছিলেন এবং অনুভব করেছিলেন। এটি যেন এক প্রয়াণ, অর্থাৎ সেই স্বপ্নের জগতে আত্মার যাত্রা।

            ৫) অত্যাধুনিকতা থেকে মুক্তিঃ রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমসাময়িক বাস্তবতার যান্ত্রিকতা এবং রুক্ষতা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। 'স্বপ্ন' কবিতা সেই মুক্তির পথ দেখায়, যেখানে তিনি আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন অতীতের এক সুরম্য ও শান্তিময় জগতে। এটি যেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা থেকে পালিয়ে কল্পনার আশ্রয় নেওয়া, যা কবির সংবেদনশীল মনের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।আর সেখান থেকে-

           •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কল্পনা' কাব্যগ্রন্থের 'স্বপ্ন' কবিতাটি নিঃসন্দেহে প্রাচীন ভারতের এক স্বপ্ন প্রয়াণ। এটি কবির গভীর নস্টালজিয়া, কালিদাসের প্রতি শ্রদ্ধা, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ এবং তৎকালীন বাস্তবতার একঘেয়েমি থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষার এক শিল্পসম্মত প্রকাশ। শুধু তাই নয়,কবিতাটির মাধ্যমে কবি কেবলমাত্র একটি কাল্পনিক অতীতকে ফুটিয়ে তোলেননি। ফুটিয়ে তুলেছেন প্রাচীন ভারতের যে সমৃদ্ধময় সাংস্কৃতিক ও আত্মিক ঐশ্বর্য। আর সেই ঐশ্বর্যের হৃদয়গ্রাহী প্রতিচ্ছবি স্বপ্ন কবিতাটি। যে কবিতাটি আধুনিক মানুষের কাছে এক গভীর আবেদন সৃষ্টি করে।আর প্রেক্ষিতে আমরা অবশ্যই বলতে পারি যে, 'স্বপ্ন কবিতাটি প্রাচীন ভারতের এক স্বপ্ন প্রয়াণ'।

 ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDARBAN" Youtube channel 🙏

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...