Skip to main content

রীতি আত্মা কাব্যস্য- আলোচনা করো।

'রীতি আত্মা কাব্যস্য' আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মেজর)।


          'রীতি আত্মা কাব্যস্য' এই উক্তিটির অর্থ হলো, 'রীতিই কাব্যের আত্মা'। ভারতীয় কাব্যতত্ত্বের ইতিহাসে এই ধারণাটি রীতিবাদ নামে পরিচিত। যার প্রধান প্রবক্তা হলেন অষ্টম শতকের বিখ্যাত পণ্ডিত আচার্য বামন। তাঁর রচিত 'কাব্যালঙ্কারসূত্রবৃত্তি' নামক গ্রন্থে তিনি এই মতবাদটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেখানে-

বামনের রীতির ধারণাঃবামনের মতে, কাব্য শুধু ভাবের প্রকাশ নয়, বরং একটি বিশেষ শৈলীর মধ্য দিয়ে সেই ভাবকে উপস্থাপন করা। এই বিশেষ শৈলীকেই তিনি 'রীতি' বলেছেন। তাঁর মতে, 'বিশিষ্ট পদরচনা রীতি' অর্থাৎ, শব্দের বিন্যাস এবং বাক্য গঠনের একটি বিশেষ ধরনই হলো রীতি। তিনি মনে করতেন, এই বিশেষ শৈলীই একটি সাধারণ বাক্যকে কাব্যে পরিণত করে।আসলে-

           বামন রীতির সঙ্গে 'গুণ'-এর গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। তাঁর মতে, গুণ বা কাব্যিক সৌন্দর্যই রীতির ভিত্তি। এই গুণগুলির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই একটি রীতি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে।

পন্ডিত আচার্য বামন তিনটি প্রধান রীতির কথা বলেছেন।আর সেগুলি হলো- 

)বৈদর্ভী রীতিঃ এটি সর্বশ্রেষ্ঠ রীতি হিসেবে বিবেচিত। এই রীতিতে সমস্ত কাব্যিক গুণ যেমন—মাধুর্য, প্রসাদ, ওজঃ, ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে। এটি শ্রুতিমধুর ও কোমল শব্দ ব্যবহারের জন্য পরিচিত এবং হৃদয়গ্রাহী ভাব প্রকাশের জন্য উপযোগী।

২)গৌড়ী রীতিঃএই রীতিতে ওজঃ (দীপ্তি) এবং কান্তি (উজ্জ্বলতা) গুণের প্রাধান্য থাকে। এতে দীর্ঘ সমাসযুক্ত পদ এবং কঠোর ব্যঞ্জনাবর্ণের ব্যবহার বেশি হয়। বীরত্বপূর্ণ, উদ্দীপনামূলক বা রুদ্র রসের ভাব প্রকাশের জন্য এই রীতি ব্যবহৃত হয়।

৩)পাঞ্চালী রীতিঃ এটি বৈদর্ভী ও গৌড়ী রীতির মাঝামাঝি একটি অবস্থা। এতে মাধুর্য এবং সুকুমারতা থাকে, তবে বৈদর্ভীর মতো সমস্ত গুণ এতে পাওয়া যায় না। এই রীতিতে দীর্ঘ সমাসের ব্যবহার সাধারণত এড়িয়ে চলা হয়।

    •বামনের রীতিবাদের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা•

             •বামনের রীতিবাদ ভারতীয় কাব্যতত্ত্বে এক নতুন দিক উন্মোচন করে। এই মতবাদটি কাব্যের বাহ্যিক সৌন্দর্য বা শৈলীর ওপর জোর দেয়, যা পরবর্তীকালের অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ধ্বনির সঙ্গে পার্থক্যঃ পরবর্তীকালের বিখ্যাত ধ্বনিবাদী আচার্য আনন্দবর্ধন 'ধ্বনি' বা ব্যঞ্জনাকে কাব্যের আত্মা বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, কাব্যর অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাই তার মূল প্রাণ, বাহ্যিক শৈলী নয়। এই দিক থেকে বামনের রীতিবাদ ধ্বনিবাদের চেয়ে কম গভীর বলে বিবেচিত হয়।

 •অলঙ্কার ও বক্রোক্তির সঙ্গে সম্পর্কঃ যদিও বামন রীতিকে প্রধান বলেছেন, কিন্তু অন্যান্য অলঙ্কারবাদী যেমন ভামহ, দণ্ডী প্রমুখ অলঙ্কারকেই কাব্যের সৌন্দর্য মনে করতেন। আবার কুন্তক তাঁর বক্রোক্তি মতবাদে বিশেষ উক্তিভঙ্গিকে কাব্যর জীবন বলে বর্ণনা করেছেন।

        •বামনের রীতিবাদ একটি পূর্ণাঙ্গ কাব্যতত্ত্ব হিসেবে না হলেও, কাব্যের শৈলী বা রচনাশৈলীর গুরুত্ব তুলে ধরতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এই রীতি বাদ আমাদের শেখায় যে, একটি কাব্যের মর্ম শুধু তার বিষয়বস্তুতে নয়, বরং সেই বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করার বিশেষ ভঙ্গিতেও নিহিত থাকে।

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...