Skip to main content

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের(RMV)আরণ্যক রচনাংশটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক'রচনাংশটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদ, উচ্চমাধ্যমিক বাংলা)। 

          •আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক' উপন্যাসটির নামকরণ অত্যন্ত সার্থক ও তাৎপর্যপূর্ণ।আর এই নামকরণের সার্থকতার প্রসঙ্গে  আমরা দেখি এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারি। আর এই প্রেক্ষিতে আমরা এই রচনাংশে দেখি-

          •আক্ষরিক অর্থ ও পটভূমিঃ আমরা জানি যে,' আরণ্যক' শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো- 'অরণ্য সংক্রান্ত' বা 'বনের সাথে সম্পর্কিত' বিষয়।আর সেখানে উপন্যাসের প্রধান পটভূমি হলো ভাগলপুর ও পূর্ণিয়া জেলার বিস্তীর্ণ অরণ্যভূমি, যে অরণ্যভূমিতে উপন্যাসের কথক সত্যচরণ জমিদারীর ম্যানেজারের কাজে গিয়েছিলেন। এই অরণ্য, তার গাছপালা, জীবজন্তু, এবং তার মধ্যে বসবাসকারী ব্রাত্য মানুষের জীবনযাপন - সবকিছুই উপন্যাসের মূল বিষয়। তাই নামকরণটি সরাসরি উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তুকে নির্দেশ করে থাকে। যেখানে-

          •প্রকৃতি প্রধান চরিত্রঃ সাধারণত উপন্যাসে প্রকৃতিকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু 'আরণ্যক' উপন্যাসে প্রকৃতি নিজেই একটি প্রধান চরিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। সত্যচরণের নাগরিক মন প্রথমে অরণ্যের নির্জনতাকে মেনে নিতে না পারলেও ধীরে ধীরে সে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যায়। অরণ্যের সৌন্দর্য, রহস্য, নীরবতা, এবং তার মাঝে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা উপন্যাসের চালিকাশক্তি। এখানে অরণ্য কেবল দৃশ্যাবলী নয়, এটি জীবন্ত সত্তা যা সত্যচরণের জীবন ও মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।আর সেখানে-

          •মানব ও প্রকৃতির সম্পর্কঃ আরণ্যক রচনাংশে অরণ্যের পাশাপাশি অরণ্যবাসী মানুষ, তাদের সরল জীবন, সুখ-দুঃখ, সংস্কার, বিশ্বাস এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্কও চিত্রিত হয়েছে। রাজু পাঁড়ে, গনু মাহাতো, যুগলপ্রসাদ, কুন্তা, ভিনসেন্ট - এই চরিত্রগুলো অরণ্যেরই অংশ। তাদের জীবন অরণ্যকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। অরণ্যের ধ্বংস তাদের জীবনেও নেমে আসে বিপর্যয়। এই দিক থেকে 'আরণ্যক' নামকরণটি মানুষ ও প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকে তুলে ধরা হয়েছে। আর সেখানে- 

        •আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক ব্যঞ্জনাঃ ভারতীয় সংস্কৃতিতে 'আরণ্যক' বলতে বেদের সেই অংশকেও বোঝায় যা অরণ্যে পঠিত হতো এবং যেখানে জীবন ও জগতের গভীর দার্শনিক আলোচনা থাকত। বিভূতিভূষণের 'আরণ্যক' উপন্যাসটিও কেবল একটি স্থানের বর্ণনা নয়, এটি জীবনের এক গভীর দার্শনিক অনুসন্ধানের ফল। সত্যচরণের অরণ্যবাস তাকে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে, জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পেতে এবং প্রকৃতির অলৌকিক সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। উপন্যাসের শেষে সত্যচরণের অরণ্য বিনাশের প্রতি যে গভীর অনুতাপ ও শূন্যতাবোধ, তা উপনিষদের প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধেরই প্রতিফলন। যেখানে-

         •লেখকের আত্মিক সম্পর্কঃবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কিছুদিন বিহারের জঙ্গল মহলে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অরণ্যের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং সেখানকার মানুষের প্রতি সহানুভূতি এই উপন্যাসের প্রাণ। তাঁর আত্মজীবনীর অংশবিশেষ এই উপন্যাসে মিশে আছে। 'আরণ্যক' নামটি তাঁর নিজের প্রকৃতির প্রতি প্রগাঢ় আত্মিক সম্পর্ককে তুলে ধরে।

                •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, 'আরণ্যক' নামটি এই রচনাংশের মূল বিষয়বস্তু, প্রধান চরিত্র (অরণ্য), মানব-প্রকৃতির সম্পর্ক এবং লেখকের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি – সবকিছুকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।সুতরাং আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, এই আরণ্যক নামকরণটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক,সার্থক এবং ব্যঞ্জনাময়।

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...