জৈন দর্শন মতে অনুব্রত ও মহাব্রত র মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন মাইনর)।
আমরা জানি যে,জৈন দর্শন অনুসারে অনুব্রত এবং মহাব্রত দুটিই একই পাঁচটি মৌলিক নীতি বা ব্রতকে অনুসরণ করে।আর সেই ৫টি নীতি হলো- •অহিংসা (কোনো জীবকে আঘাত না করা), •সত্য (মিথ্যা না বলা), •অস্তেয় (চুরি না করা), •ব্রহ্মচর্য (যৌন সংযম), এবং। •অপরিগ্রহ (সম্পত্তির প্রতি অনাসক্তি)।
•তবে এই অনুব্রত ও মহাব্রত নামক দুটি ব্রতের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো এদের অনুশীলন এবং পালনের কঠোরতায় সেখানে অনুব্রত হলো গৃহস্থদের জন্য অপেক্ষাকৃত শিথিল বা সীমিত রূপ। আর অপরপক্ষে মহাব্রত হলো সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের জন্য অত্যন্ত কঠোর ও পূর্ণাঙ্গ রূপ। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে উভয়ের মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায় তা হল-
১. অনুব্রতঃঅনুব্রত হলো গৃহী বা সাধারণ মানুষের জন্য নির্ধারিত ব্রত। যারা সাংসারিক জীবনযাপন করেন, তাদের পক্ষে কঠোরভাবে সব নিয়ম পালন করা সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য এই ব্রতগুলো কিছুটা সহজ ও শিথিল করা হয়েছে। যেখানে- অনুব্রত পালনকারী হলেন গৃহস্থ, অর্থাৎ যারা পরিবার ও সমাজের মধ্যে বাস করেন। সেকারণে এখানে এই নিয়মের কঠোরতা অপেক্ষাকৃত কম এবং সীমিত। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি-
•অহিংসা নীতিঃ এখানে গৃহী ব্যক্তি শুধু স্থূল বা ইচ্ছাকৃত হিংসা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন।যেমন-ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রাণীকে হত্যা করা। আবার সাংসারিক জীবনে স্বাভাবিক কাজকর্মে যেটুকু হিংসা হয়। যেমন-হাঁটাচলার সময় ছোট পোকা মারা যাওয়া, এই সকল বিষয় গুলি এখানে গণনা করা হয় না। পাশাপাশি- ব্রহ্মচর্যঃ এই পর্বে গৃহী ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র পরস্ত্রী বা পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিষিদ্ধ। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক জৈন ধর্মানুসারে দোষের নয়। আবার অপরদিকে- অপরিগ্রহঃঅনুব্রত নীতি তত্ত্ব অনুসারে একজন গৃহস্থের পক্ষে সব সম্পত্তি ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তাই তাকে নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি বা আসক্তি ত্যাগ করতে বলা হয়।
২) মহাব্রতঃআমরা জানি যে,মহাব্রত হলো সন্ন্যাসী এবং সন্ন্যাসিনীদের জন্য নির্ধারিত ব্রত। যারা সংসার ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক সাধনার পথ বেছে নেন, তাদের মোক্ষলাভের জন্য। তবে এই ব্রতগুলো কঠোরভাবে ও সম্পূর্ণরূপে পালন করতে হয়। যেখানে এই ব্রতের পালনকারীরা হলেন- জৈন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী। তবে এখানে- কঠোরতা অত্যন্ত কঠিন এবং পূর্ণাঙ্গ। তবে এখানে কোনো ব্যতিক্রমের অনুমতি নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে- •অহিংসা একজন সন্ন্যাসীকে কায়িক, মানসিক ও বাচনিক—এই তিনভাবেই সব ধরনের হিংসা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হয়। তবে এর মধ্যে অতি সূক্ষ্ম হিংসাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় যাতে কোনো জীব না মরে, সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়। পাশাপাশি- •ব্রহ্মচর্যসন্ন্যাসীদের জন্য সব ধরনের যৌনতা ও যৌন চিন্তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অপরদিকে অপরিগ্রহ সন্ন্যাসীকে সব ধরনের সম্পত্তি ও পার্থিব আসক্তি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করতে হয়। যার ফলে তাদের কোনো সহায়-সম্বল জীবনে থাকে না।
অনুব্রত ও মহাব্রত র পার্থক্য
১) অনুব্রত পালনকারী হলেন গৃহস্থ বা সাধারণ মানুষ। কিন্তু মহাব্রত পালনকারীরা হলেন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীরা।
২) অনুব্রত পালনের উদ্দেশ্য হলো-মোক্ষলাভের পথে অগ্রসর হওয়া কিন্তু- মহাব্রত হলো মোক্ষলাভের জন্য পূর্ণাঙ্গ সাধন |
৩) অনুব্রত র কঠোরতা অপেক্ষাকৃত শিথিল ও সীমিত।কিন্তু- মহাব্রত অত্যন্ত কঠোর ও পূর্ণাঙ্গ সাধনা।
৪) অনুব্রত র মূল বক্তব্য অহিংসা। যেখানে স্থূল হিংসা থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু- মহাব্রতে কায়িক, মানসিক ও বাচনিক সব হিংসা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা |
৫) অনুব্রত পালনে ব্রহ্মচর্য হতে হয়। যেখানে পরস্ত্রী বা পরপুরুষের সঙ্গে সব সম্পর্ক নিষিদ্ধ। কিন্তু- মহাব্রতে সব ধরনের যৌনতা ও যৌন চিন্তা পরিপূর্ণ নিষিদ্ধ।
৬) অনুব্রত পালনে থাকে অপরিগ্রহ। যেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু- মহাব্রত পালনে পালনকারীকে সব ধরনের সম্পত্তি ও আসক্তি সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে হয।
Comments
Post a Comment