ঘরে বাইরে উপন্যাসে(4th Semester) শ্রেয় এবং প্রেয়'র দ্বন্দ্ব বিমলা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে- উপন্যাস অবলম্বনে তা আলোচনা করো।
'ঘরে বাইরে' উপন্যাসে শ্রেয় এবং প্রেয়'র দ্বন্দ্ব বিমলা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে- উপন্যাস অবলম্বনে তা আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মেজর)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম উপন্যাস ঘরে বাইরে।আর সেই উপন্যাসে শ্রেয় এবং প্রেয়'র দ্বন্দ্বকে নিখিলেশ ও সন্দীপের চরিত্রের মাধ্যমে এবং বিমলার মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।আর সেখানে আমরা দেখতে পাই -
•ঘরে বাইরে উপন্যাসে বিমলা চরিত্রের মধ্যে শ্রেয় এবং প্রেয়'র দ্বন্দ্ব অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আর সেখানে 'শ্রেয়' বলতে বোঝানো হয়েছে কল্যাণকর ও নৈতিকতাকে। যা সমাজের আদর্শ ও নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর 'প্রেয়' বলতে বোঝানো হয়েছে ব্যক্তিগত ভালো লাগা, আকর্ষণ এবং আত্মসুখকে। উপন্যাসের মূল কাহিনি এই দুই বিপরীতমুখী শক্তির টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিমলার মন। আর সেই কেন্দ্রবিন্দুতে আমরা দেখি-
•নিখিলেশ ও বিমলার সম্পর্কঃ উপনযাসের শুরুতেই আমরা দেখি শ্রেয়'র প্রতিভূ হিসেবে বিমলার জীবন ছিল নিখিলেশময়।যার আদর্শে, মূল্যবোধে ও ভালোবাসায় বিমলার জীবন ছিল পূর্ণ এবং মধুময়।তবে নিখিলেশ ছিলেন উদার, প্রগতিশীল এবং স্বদেশী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তিনি বিমলাকে কেবল একজন স্ত্রী হিসেবে নয়, বরং একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়,তিনি বিমলার মনে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন এবং তাকে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। নিখিলেশ-এর এই দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল বিমলার জীবনের শ্রেয়। বিমলা নিখিলেশের এই উদারতা ও ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে এক শান্ত, স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। তবে-
সন্দীপের হঠাৎ আগমনেঃ নিখিলেশের বন্ধু সন্দীপ-এর আগমনের পর বিমলার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।আর সেই নতুন অধ্যায়টি হলো 'প্রেয়' র হাতছানি।সন্দীপের চরিত্রটি ছিল নিখিলেশ-এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সে ছিল আবেগপ্রবণ, বাকপটু এবং দেশপ্রেমের নামে বিমলার মনে এক গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি করে। যেখানে- •সন্দীপের চোখে বিমলা হয়ে ওঠে 'বন্দেমাতরম'-এর প্রতিমূর্তি, যার মাধ্যমে সে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে চেয়েছিল। সন্দীপের এই মোহময়ী ব্যক্তিত্ব এবং তার চাটুকারিতা বিমলার মনে এক অজানা প্রেমের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। সন্দীপের এই আকর্ষণই ছিল বিমলার জীবনের প্রেয়। এই প্রেয়'র প্রলোভনে পড়ে বিমলা তার স্বামী নিখিলেশের প্রতি তার কর্তব্য, নৈতিকতা এবং ভালোবাসা ভুলে যেতে থাকে। অতঃপর বিমলার মনে বাসা বাঁধে-
•চরম দ্বান্দ্বিকতার প্রকাশ ও পরিণতিঃ নিখিলেশ ও সন্দীপের দ্বান্দ্বিকতায় বিমলার জীবন শ্রেয় এবং প্রেয়'র দ্বন্দ্ব তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। যেখানে এক দিকে রয়েছে নিখিলেশের প্রতি তার নৈতিক দায়িত্ব এবং ভালোবাসার বন্ধন, যা তাকে শ্রেয়'র পথে চালিত করে। অন্য দিকে রয়েছে সন্দীপের প্রতি তার অন্ধ আকর্ষণ, যা তাকে প্রেয়'র পথে টেনে নিয়ে যায়। এই দ্বন্দ্বে বিমলা সন্দীপের প্রলোভনে পড়ে নিখিলেশ-এর টাকা চুরি করে সন্দীপের হাতে তুলে দেয়। এখানে এই ঘটনাটি বিমলার জীবনে নৈতিক পতনের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা হয়। আর এই প্রেক্ষিতে আমরা-
•পরিশেষে বলতে পারি যে,উপন্যাসের একেবারে শেষ দিকে বিমলা তার ভুল বুঝতে পারে।আর সেই ভুল বুঝতে পেরে বিমলা নিখিলেশের কাছে ফিরে আসে।আসলে এই পর্বে বিমলা বুঝতে পারে যে, সন্দীপের আকর্ষণ ছিল মিথ্যা এবং ক্ষণস্থায়ী। এই অনুধাবন থেকেই বিমলা বুঝতে পারে নিখিলেশের ভালোবাসা এবং আদর্শই ছিল তার জীবনের প্রকৃত শ্রেয়। কিন্তু ততক্ষণে বিমলার অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। এই ঘটনার মধ্যবর্তী সময়ে নিখিলেশকে স্বদেশী আন্দোলনের নামে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তবে বিমলা তার ভুল বুঝতে পেরে অনেকটা দূরে সরে আসে এবং তার কৃতকর্মের জন্য সে নিজেই অনুতপ্ত। যার ফল স্বরূপ বিমলকে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তবে বিমলার এই উপলব্ধিই প্রমাণ করে যে, প্রেয়'র পথ সাময়িক আনন্দের জন্ম দিলেও, শেষ পর্যন্ত শ্রেয়'র পথই মানুষকে সত্যিকারের শান্তি ও পূর্ণতা এনে দিতে সক্ষম। আর এটাই বিমলার জীবনে শিক্ষা, আর সেই শিক্ষা নিয়েই বিমলা আগামী দিনগুলো কাটিয়ে দেয়।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment