Skip to main content

সমুদ্র গুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা (4th.Sem.) করো।

সমুদ্র গুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সেমিস্টার, ইতিহাস মাইনর)।

         আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,সমুদ্রগুপ্তকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর শাসনকালটি ছিল আনুমানিক ৩৩৫-৩৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। আর ঐ সময়কালের মধ্যে তাঁর সামরিক বিজয়, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সময়ে এলাহাবাদ প্রশস্তি, যা তাঁর সভাকবি হরিষেণ দ্বারা রচিত এবং এটি তাঁর কৃতিত্বের প্রধান উৎস বলে বিবেচিত। যেখানে তাঁর দক্ষতার বেশ কিছু কৃতিত্ব আমরা দেখতে পাই।আর সেই কৃতিত্বগুলি হলো-

            •সামরিক বিজয় ও সাম্রাজ্য বিস্তার•

সমুদ্রগুপ্তের প্রধান কৃতিত্ব ছিল তাঁর দিগ্বিজয় অভিযান, যা মাধ্যমে তিনি এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সামরিক অভিযানকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।আর সেগুলি হলো- 

        •উত্তর ভারত বিজয়ে সমুদ্রগুপ্তঃ সমুদ্রগুপ্ত প্রথম দিকে উত্তর ভারতের নয়জন রাজাকে পরাজিত করে তাঁদের রাজ্য সরাসরি তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এই বিজয়গুলো গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় করে।

      •দক্ষিণ ভারত বিজয়ে সমুদ্রগুপ্তঃ সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারত বিজয়ের পর তিনি দাক্ষিণাত্যে অভিযান চালান এবং সেখানকার ১২ জন রাজাকে পরাজিত করেন। তবে তিনি এই রাজ্যগুলো সরাসরি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেননি। বরং, তিনি একটি বিশেষ নীতি অনুসরণ করেন, যাকে বলা হয় 'গ্রহণ-পরিমোক্ষ-অনুগ্রহ' নীতি। এর অর্থ হলো, প্রথমে শত্রুকে পরাজিত ও বন্দি করা (গ্রহণ), তারপর মুক্তি দেওয়া (পরিমোক্ষ) এবং অবশেষে তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের অধীনস্থ করে রাখা (অনুগ্রহ)। এই দূরদর্শী নীতির মাধ্যমে তিনি দূরবর্তী দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো থেকে কর ও আনুগত্য লাভ নিশ্চিত করেন।

       •সীমান্তবর্তী রাজ্য ও উপজাতি বিজয়ে সমুদ্রগুপ্তঃ উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বাইরেও তিনি পাঁচটি সীমান্তবর্তী রাজ্য (যেমন সমতট, কামরূপ, নেপাল) এবং নয়টি উপজাতি গণরাজ্যকে (যেমন মালব, অর্জুনায়ন, যৌধেয়) নিজের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন।এই ব্যাপক সামরিক সাফল্যের জন্য ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁকে 'ভারতের নেপোলিয়ন' উপাধি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, উত্তর ও দক্ষিণ ভারত বিজয়ের পর তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞও করেছিলেন।

         •সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবদান•

আমরা জানি যে,সমুদ্রগুপ্ত কেবলমাত্র একজন সুদক্ষ যোদ্ধা ছিলেন না, তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক এবং শিল্পের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন।আর সেখানে আমরা সমুদ্রগুপ্তকে দেখি-

      •রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় সমুদ্রগুপ্তঃ সমুদ্র গুপ্তে ভালো করেই জানতেন যে, বিশাল সাম্রাজ্যের সব অংশ সরাসরি শাসন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।তাই তিনি দাক্ষিণাত্যে 'গ্রহণ-পরিমোক্ষ-অনুগ্রহ' নীতি গ্রহণ করেন, যা তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়।

      •শিল্প ও সাহিত্যে সমুদ্রগুপ্তঃ সমুদ্রগুপ্ত নিজে একজন কবি ও সংগীতজ্ঞ ছিলেন। আর তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রচলিত মুদ্রায় তাঁকে বীণা বাজানোর চিত্রটি।এ থেকে তাঁর শিল্পানুরাগের প্রমাণ মেলে। তাঁর রাজসভায় বহু গুণীজন সমবেত হয়েছিলেন। হরিষেণের মতো পন্ডিত তাঁর সভাকবি ছিলেন। শুধু তাই নয় -

      •ধর্মীয় সহিষ্ণুতায় সমুদ্রেগুপ্তঃ আমরা জানি সমুদ্র গুপ্ত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুরাগী ছিলেন এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন। তবুও তিনি অন্য ধর্মের প্রতিও সহিষ্ণু ছিলেন। এর প্রমাণ হলো, সিংহলের রাজা মেঘবর্ণকে বোধগয়ায় একটি বৌদ্ধ মঠ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া।সমুদ্রগুপ্তের এই বহুমুখী কৃতিত্বের কারণেই গুপ্ত সাম্রাজ্য তার স্বর্ণযুগের দিকে অগ্রসর হতে পেরেছিল একথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...