Skip to main content

কান্ট নৈতিক বিষয়কে(4t.Sem,Philosophy.) নিঃস্বার্থ আদেশ বলেছেন কেন তা আলোচনা করো।

কান্ট নৈতিক বিষয়কে নিঃস্বার্থ আদেশ বলেছেন কেন তা আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন মাইনর)।

          আমরা পাশ্চাত্য দর্শন হতে জানি যে,জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট নৈতিক বিষয়কে 'নিঃস্বার্থ আদেশ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আসলে এর মূল কারণ হলো-কান্টের মতে নৈতিকতার ভিত্তি কোনো বাহ্যিক ফলাফল, আকাঙ্ক্ষা বা শর্তের ওপর নির্ভর করে না। বরং বলা যেতে পারে যে,এটি যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।আর সেখানে-

          •নিঃস্বার্থ আদেশের মূল ভিত্তি হিসেবে কান্ট তাঁর নীতিবিদ্যায় দুই ধরনের আদেশের কথা বলেছেন। আর সেই আদেশ দুটি হলো-

         ১) শর্তাধীন আদেশঃ কান্টের মতে শর্তাধীন আদেশ কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে-                                                                      "যদি তুমি পরীক্ষায় ভালো করতে চাও, তবে তোমাকে পড়ালেখা করতে হবে।"                                                    এখানে পড়ালেখা করা একটি শর্ত, যা কেবল একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের (ভালো ফল) ওপর নির্ভরশীল। এটি নিঃস্বার্থ নয়, কারণ এর পেছনে একটি স্বার্থ বা উদ্দেশ্য কাজ করে থাকে। অপরদিকে-

       ২)নিঃস্বার্থ আদেশঃ কান্টের মতে নিঃস্বার্থ আদেশ সম্পূর্ণভাবে নিঃশর্ত ও সর্বজনীন। এটি কোনো উদ্দেশ্য বা ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না। এটি একটি যুক্তির অপরিহার্য নীতি, যা প্রতিটি যুক্তিবাদী সত্তার জন্য অবশ্য পালনীয়। এখানে মূল কথা হলো, কোনো কাজ শুধুমাত্র সেই কারণে করতে হবে কারণ তা করাই নৈতিকভাবে সঠিক। তবে এই আদেশ নিঃস্বার্থ কেন?

         আসলে কান্টের মতে- নৈতিকতা কোনো শর্তের অধীন হতে পারে না। যদি আমরা কোনো কাজ করি কারণ তার থেকে কোনো সুবিধা বা সুখ লাভ হবে, তবে সেই কাজটি নৈতিকভাবে সৎ বলে গণ্য হবে না। একটি কাজ তখনই নৈতিক হয় যখন তা কেবলমাত্র কর্তব্যের খাতিরে করা হয়।উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে-                                                 একজন দোকানদার যদি সৎ থাকেন তাহলে তার সেই সততা ব্যবসার জন্য ভালো। তবে তার এই কাজটি নিঃস্বার্থ বলা যাবে না। কারণ এটি স্বার্থপরতার একটি রূপ। কিন্তু যদি তিনি কেবল সততাকে একটি নৈতিক কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করে সৎ থাকেন, তবে তার কাজটি নিঃস্বার্থ এবং নৈতিক বলা যাবে। আর এই সকল যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে কান্ট নিঃস্বার্থ আদেশের তিনটি মূল সূত্র দিয়েছেন। আর সেই সূত্র গুলো হলো-

      ১)সর্বজনীনতার সূত্রঃ সর্বজনীনতার সূত্র অনুসারে এমন একটি নীতি অনুসারে কাজ করতে হবে যা একইসাথে একটি সর্বজনীন আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

     ২) মানবতার সূত্রঃ মানুষকে শুধু উপায় হিসেবে ব্যবহার না করে সর্বদা উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহার করা শ্রেয়।

     ৩) স্ব-আইন প্রণয়নের সূত্রঃ এমনভাবে কাজ করার দরকার যেখানে নিজে নৈতিক আইনের একজন আইন প্রণেতা বা বিধানকর্তা হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব।

              •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,এই তিনটি সূত্রই প্রমাণ করে যে, কান্টের নৈতিকতা স্বার্থ বা ফলাফলের ঊর্ধ্বে এক বিশুদ্ধ কর্তব্যের ধারণা।আর এই কারণেই কান্ট নৈতিক বিষয়কে নিঃস্বার্থ আদেশ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...