Skip to main content

বেগম রোকেয়া র হিমালয় দর্শন প্রবন্ধের মূলভাব বিশ্লেষণ করো।

বেগম রোকেয়া র হিমালয় দর্শন প্রবন্ধের মূলভাব বিশ্লেষণ করো (পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, বাংলা-নবম শ্রেণী)।           

          আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,বেগম রোকেয়া র 'হিমালয় দর্শন' একটি ভ্রমণ কাহিনীমূলক প্রবন্ধ।যে প্রবন্ধে তিনি হিমালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে গভীর মুগ্ধতার অনুভূতি তুলে ধরেছেন। আসলে এটি কোনো প্রচলিত খোস গল্প নয়। বরং আমরা বলতে পারি,লেখিকার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতিফলনের ফল এই প্রবন্ধ।আর সেই উপলব্ধিতে আমরা দেখি-

 প্রকৃতির মুগ্ধতায় লেখিকাঃ আমারা পূর্বেই বলেছি-লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয়ের বিশালতা ও সৌন্দর্য দর্শনে অভিভূত হয়েছেন। আর অভিভূত হয়ে তিনি সেখানকার ঝর্ণার জলপ্রপাত, কুয়াশার রহস্যময়তা, মেঘ ও বাতাসের খেলা, এবং সূর্যের অপরূপ আলোর সৌন্দর্যকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন।আসলে তাঁর লেখায় প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি প্রকাশ পেয়েছে। তাই তিনি বলেন-                                                                                "যত দেখি, ততই দর্শন পিপাসা শতগুণ বাড়ে।" 

আদিবাসীদের জীবনযাত্রাঃ লেখিকা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে থেমে থাকেননি। বরং বলা যেতে পারে,সেখানকার আদিবাসী ভুটিয়াদের জীবনযাত্রাকেও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। শুধু তাই নয়,তিনি তাদের কঠোর পরিশ্রম, সাহসিকতা এবং স্বাধীন মনোভাবের অকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন। এখানে বিশেষ করে ভুটিয়া নারীদের কর্মঠ জীবন,  দেখে তিনি মুগ্ধ হন। পাশাপাশি-

ভুটিয়া নারীরদের স্বাবলম্বিতাঃ বেগম রোকেয়াএকজন নারী হিসেবে ভুটিয়া নারীরদের স্বাবলম্বী ও কর্মঠ জীবনযাত্রাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।আর সেই গুরুত্বে তিনি দেখিয়েছেন যে-এখানকার নারীরা কেবলমাত্র গৃহের কাজে সীমাবদ্ধ নন।যা তারা কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা করে তুলতে সক্ষম। আসলে এটি লেখিকার নারী জাগরণমূলক চিন্তাভাবনার গভীর প্রতিফলন। শুধু তাই নয়-

আধ্যাত্মিক ভাবনাঃ  লেখিকা প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাধ্যমে এক বিশেষ ধরনের আধ্যাত্মিক উপলব্ধি লাভ করেন। যেখানে হিমালয়ের বিশালতা দেখে তিনি সৃষ্টিকর্তার মহিমা অনুভব করেন। আর সেই অনুভব থেকে তিনি প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।তাই তাঁর লেখায় প্রকৃতি সীমানা ছাড়িয়ে অসীমের দিকে যাত্রা শুরু করে।

             •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,বেগম রোকেয়ার হিমালয় দর্শন প্রবন্ধটি কেবলমাত্র ভ্রমণকাহিনী নয়।আসলে এটি লেখিকার প্রকৃতিপ্রেম, সমাজ ভাবনা এবং নারী জাগরণমূলক দর্শনের দলিল।



Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...