Skip to main content

ভারতের কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্ক আলোচনা করো।

ভারতের কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্ক আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর)।

            আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,ভারতের কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্ক একটি জটিল ও গতিশীল ব্যবস্থা।আর এই ব্যবস্থাটি সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ এবং কিছু স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আসলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই সম্পর্ক আলোচনার প্রধান দিকগুলো হলো- রাজস্ব বন্টন, ঋণের বিধান এবং আর্থিক জরুরি অবস্থা। যেখানে -

       ••রাজস্ব বন্টনঃ আমরা জানি যে,রাজস্ব বন্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আয়ের উৎস সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়,সংবিধানের সপ্তম তফসিলের তিনটি তালিকা (কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা, ও যুগ্ম তালিকা) অনুযায়ী এই ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।আর সেই তালিকা অনুযায়ী-

       •কেন্দ্রীয় তালিকাঃ ভারতীয় সংবিধানের কেন্দ্রীয় তালিকায় উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে কর আদায়ের ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রের হাতে থাকে। যেমন: আয়কর (কৃষি আয় ব্যতীত), কর্পোরেশন কর, কাস্টমস ও আবগারি শুল্ক। অতঃপর -

       •রাজ্য তালিকাঃ রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়গুলো থেকে কর আদায় করে রাজ্য সরকার। যেমন: ভূমি রাজস্ব, কৃষি আয়কর, পেশা কর, বিক্রয় কর (কিছু নির্দিষ্ট পণ্য ছাড়া)। সবশেষে-

      •যুগ্ম তালিকাঃ ভারতীয় সংবিধানের যুগ্ম তালিকায় কোনো করের বিষয় নেই। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই এ তালিকার বিষয়গুলোতে আইন প্রণয়ন করতে পারে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী -

        •অর্থ কমিশন হলো একটি সাংবিধানিক সংস্থা।যে সংস্থাটি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর রাষ্ট্রপতি দ্বারা গঠিত হয়।তবে এই কমিশন কেন্দ্র থেকে রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্বের একটি সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রদান করে থাকে।আর এই সুপারিশগুলো সাধারণত কর বন্টন এবং অনুদান (Grants-in-aid) সম্পর্কিত। যেখানে ঋণের বিধান অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই ঋণ নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে।আর সেখানে -

      •কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের একত্রিত তহবিল থেকে দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে ঋণ নিতে পারে। আবার রাজ্য সরকার ভারতের একত্রিত তহবিলের নিশ্চয়তার ওপর দেশের অভ্যন্তরে ঋণ নিতে পারে। তবে যদি কোনো রাজ্য কেন্দ্রের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে, তবে কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া নতুন ঋণ নিতে পারবে না। তবে -

        •আর্থিক জরুরি অবস্থাঃ সংবিধানের ৩৬০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যদি রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, ভারতের আর্থিক স্থিতিশীলতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে, তখন তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে এমনতর এই পরিস্থিতিতে-

             কেন্দ্র রাজ্যগুলোকে আর্থিক নীতি মেনে চলার নির্দেশ দিতে পারে। শুধু তাই নয়,কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের বেতন ও ভাতা কমাতে পারে। পাশাপাশি রাজ্যের সব অর্থ বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য সংরক্ষিত রাখতে পারে।

             পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উপরিউক্ত ব্যবস্থাগুলি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।আর সেই সাহায্যের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে একটি সুষম ও সহযোগিতামূলক আর্থিক সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য অঙ্গ।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...