দারিদ্র্যের আবহাওয়ায় এই দুটো রিপু তাকে প্রকৃতিস্থ থাকতে দেয়নি - শজারুর কাঁটা উপন্যাস অবলম্বনে মানুষটির প্রকৃতিস্থ না থাকতে দেওয়ার অবস্থার পরিচয় দাও।
"দারিদ্র্যের আবহাওয়ায় এই দুটো রিপু তাকে প্রকৃতিস্থ থাকতে দেয়নি।"-'শজারুর কাঁটা' উপন্যাস অবলম্বনে মানুষটির প্রকৃতিস্থ না থাকতে দেওয়ার অবস্থার পরিচয় দাও(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা মাইনর)।
•আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'শজারুর কাঁটা' উপন্যাসে উল্লিখিত এই উক্তিটির মধ্যে দিয়ে একটি বিশেষ মানুষের করুণ অবস্থার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।যেখানে 'দারিদ্র্যের আবহাওয়া' এই শব্দদ্বয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে- অভাব, অনটন এবং আর্থিক দুর্দশার এক ক্রমাগত চাপ। আর সেখানে 'দুটো রিপু' হলো সেই প্রবল লোভ এবং ভয়, যা এই দারিদ্র্যের ফলস্বরূপ মানুষটির মধ্যে জন্ম নেয়। এই দুটো রিপুই তাকে তার স্বাভাবিক বা "প্রকৃতিস্থ" অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।আর সেখানে - •শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'শজারুর কাঁটা' উপন্যাসে যে চরিত্রটিকে দারিদ্র্যের আবহাওয়া এবং দুটো রিপু (লোভ ও ঈর্ষা) প্রকৃতিস্থ থাকতে দেয়নি, সে হলো প্রবাল গুপ্ত। যেখানে -
•শজারুর কাঁটা উপন্যাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, ব্যোমকেশ বক্সী রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে প্রবাল গুপ্তর আসল পরিচয় তুলে ধরে। আসলে প্রবাল ছিল এক অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে, কিন্তু হঠাৎ করে দৈব-দুর্বিপাকে সে নিঃস্ব হয়ে যায়। এই দারিদ্র্যই তার মনের মধ্যে বিষ তৈরি করে।আর তার চরিত্রে থাকা লোভ ও ঈর্ষার মতো রিপুগুলো তখন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সেখানে-
•তীব্র লোভ লালসাময় ঈর্ষার রিপুগুলির প্রভাবেই সে একের পর এক অপরাধ জগতে প্রবেশ করতে শুরু করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায়। অতঃপর সে সে প্রথমে দীপার স্বামী দেবাশিসকে হত্যা করে, কারণ দীপার প্রতি তার পুরনো ভালোবাসা এবং দেবাশিসের প্রতি ঈর্ষা তাকে তাড়া করে বেড়ায়।আর এই খুন ঢাকার জন্য সে আরও কিছু নিরীহ মানুষকে শজারুর কাঁটা দিয়ে একের পর এক হত্যা করে। তবে-
•ব্যোমকেশের মতে, প্রবাল গুপ্ত কিন্তু মোটেই পাগল ছিল না। তবে কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তার মন বিষিয়ে গিয়েছিল এবং লোভ ও ঈর্ষার মতো রিপুগুলো তাকে তার স্বাভাবিক, সুস্থ অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত করে দিয়েছিল।আসলে আমরা মানুষটির(প্রবাল গুপ্ত)প্রকৃতিস্থ অবস্থা বলতে আমরা যা জানতে পারি -
মানসিক শান্তি ও ভারসাম্যহীনঃ একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ জীবনের চড়াই-উতরাইকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে সক্ষম। কিন্তু প্রবল দারিদ্র্যের প্রভাবে এই মানুষটির মানসিক শান্তি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভাবের চিন্তা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। যার ফলে দিনের প্রতিটি সময়ে সে এক গভীর অস্থিরতার মধ্যে থেকে যায়। তবুও-
নৈতিকতার বোধহীনঃ আমরা জানি দারিদ্র্যের আগে হয়তো তার মধ্যে ভালো-মন্দের একটি স্পষ্ট ধারণা ছিল। কিন্তু এখন বেঁচে থাকার তাগিদ তাকে সেই নৈতিকতার সীমানা পার করতে বাধ্য করেছে। পেটের দায়ে বা নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য সে এমন কিছু অনৈতিক কাজ করেছে যা স্বাভাবিক অবস্থায় সে কখনও করত না। বলা যায় তাকে অপ্রকৃতিস্থ করে তোলে দিনের প্রতিটি সময়ে। তাই-
যুক্তিসঙ্গত আচরণহীনঃ সংসারের তীব্র অভাবের তাড়নায় তার বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।তাই সে এমন কিছু অস্বাভাবিক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কোনও সুস্থ মানুষ সাধারণত নেয় না বা নিতে পারে না। যার ফলে তার আচরণে দেখা গেছে এক ধরনের অস্থিরতা ও বেপরোয়া ভাব। যা তাকে এক অনৈতিক পথের কিনারায় টেনে নিয়ে যায়। তবে -
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,এই মানুষটির অর্থাৎ প্রবালের জীবন প্রমাণ করে যে, দারিদ্র্য শুধু শারীরিক কষ্টই দেয় না, বরং মানুষের মন এবং আত্মাকেও নষ্ট করে দিয়ে এক অনৈতিক, অপরাধমূলক পথে নামিয়ে দেয়। আর সেখানে লোভ তাকে বিপথে চালিত করেছে, আর ভয় তাকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।যার ফলস্বরূপ, সে তার স্বাভাবিক মানবিকতা, মানসিকতা হারিয়ে এক অস্বাভাবিক জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেই পরিবেশে আজ প্রবাল প্রকৃতিস্থ নয়।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ব্যাখ্যা সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ এবং আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment