Skip to main content

অনুমিতি ও অনুমান কাকে বলে? এই প্রসঙ্গে স্বার্থানুমিতি ও পরার্থানুমিতি মধ্যে প্রভেদ গুলি লেখো।

 অনুমিতি-

    ভারতীয় দর্শনে যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায় কে প্রমাণ বলা হয়। আর ন্যায় দর্শনে ৪ প্রকার প্রমাণ স্বীকার করা হয়। সেই প্রমাণগুলি হলো প্রত্যক্ষ অনুমান উপমান এবং শব্দ।

            আসলে অনুমান শব্দটি অনু এবং মান এই দুটি শব্দ সমন্বয়ে গঠিত। এখানে অনু শব্দের অর্থ প্রস্রাব অনু শব্দের অর্থ পশ্চাৎ এবং মান শব্দের অর্থ জ্ঞান। অর্থাৎ অনুমান শব্দের অর্থ হলো পশ্চাৎ জ্ঞান। এই জ্ঞান অন্য জ্ঞানের পরে আসে। তাই ভারতীয় দর্শনে অনুমান বলতে যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায় কে বোঝায়।আর এই অনুমানের মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান লাভ করি, সেই জ্ঞানকে বলা হয় অনুমিতি।


অনুমান -

        অনুমান হলো এমন এক প্রকার মানসিক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে জ্ঞাত বিষয়ের উপর অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। আসলে কোন এক বিষয়ের প্রত্যক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ জ্ঞান নেই এমন এক বিষয়ের জ্ঞান লাভের উপায়কে বলা হয় অনুমান। অর্থাৎ-

            অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা জ্ঞাতশত্র থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হই। তাই অনুমিতির করণকে বলা হয় অনুমান।


স্বার্থানুমিতি-

            যখন কোন ব্যক্তি নিজের জ্ঞান লাভের জন্য অনুমান করেন তখন তাকে বলা হয় স্বার্থানুমান। আর এরূপ অনুমান প্রমাণের দ্বারা যে অনুমিতি উৎপন্ন হয় তাকে বলা হয় স্বার্থানুমিতি। আসলে অনুমিতির করন বা প্রমাণকে বলা হয় স্বার্থিনুমিতি। আর সেখানে অন্যকে নিজের মতো বা জ্ঞাতসত্য বোঝানোর জন্য কোন বাক্য প্রয়োগ করা হয় না।


পরার্থনুমিতি-

                পরার্থানুমান হল অপরের জন্য অনুমান। অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি নিজের অনুমিতির বিষয়টিকে অপরের কাছে বোধগম্য করে তোলার জন্য যে অনুমান গঠন করে তখন সেটি হয় পরার্থনুমান। আসলে -

      পরার্থনুমিতি হলো সেই অনুমতি যেখানে ব্যক্তি তার সাধ্য- সংশয়- মুক্ত জ্ঞানকে অন্যের সাধ্য সংশয় দূর করার জন্য ব্যবহার করেন। অনুমিতির সাহায্যে নিজের জ্ঞাত তত্ত্বকে অন্যের কাছে সত্য বলে প্রমাণ করে ।

🌹 স্বার্থনুমিতি ও পরার্থনুমিতির মধ্যে পার্থক্য-

@ প্রথমত: স্বার্থানুমিতি হলো নিজের জানার প্রয়োজনে অনুমিতি। কিন্তু-

          পরার্থানুমান হলো অন্যকে জানা বা বোঝানোর প্রয়োজনে অনুমিতি।


@ দ্বিতীয়তঃ স্বার্থানুমিতি আগে উৎপন্ন হয় তারপরে পরার্থানুমিতি উৎপন্ন হয়। স্বার্থানুমিতি নাহলে পরার্থনুমিতি হয় না।


@ তৃতীয়তঃ স্বার্থানুমিতি হল মানসিক, এখানে ভাষা বা বাক্য প্রয়োগ করার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু -

        পরার্থনুমান বাচনিক, কারণ পাঁচটি বচনের সাহায্যে প্রকাশ করতে হয়।


@ চতুর্থত: স্বার্থানুমিতিতে ব্যক্তি তার নিজের জ্ঞান লাভের জন্য অনুমান করে থাকেন। কিন্তু -

          পরার্থনুমিতিতে ব্যক্তি নিজের অনুমিত বিষয়টিকে অপরের কাছে বোধগম্য করে তোলার চেষ্টা করেন।


@ পঞ্চমত-স্বার্থানুমিতিতে অন্যকে নিজের জ্ঞাতসত্য বোঝানোর জন্য কোন বাক্য প্রয়োগ করা হয় না। কিন্তু -

পরার্থনুমিতিতে নিজের জ্ঞাত তত্ত্বকে অন্যের কাছে সত্য বলে প্রমাণ করে।

**************************************************

        



           


          




                            

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...