বাচনিক জ্ঞান কাকে বলে? বাচনিক জ্ঞানের শর্ত সমূহ আলোচনা করো।
( বি এ দ্বিতীয় সেমিস্টার,মাইনর সিলেবাস এবং একাদশ শ্রেণী, প্রথম সেমিস্টার)
বাচনিক জ্ঞানঃ
আমরা জানি যে,'জানা' কথাটি কর্মমূলক জ্ঞানকে বোঝাতে পারে, পরিচয়মূলক জ্ঞানকে বোঝাতে পারে, আবার বচনমূলক বা বাচনিক জ্ঞানকে বোঝাতে পারে। তবে আধুনিক দর্শনে জ্ঞানের ভাষাগত দিক বা বাচনিক ব্যাখ্যার উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আধুনিক দর্শনে সেই জ্ঞান-কেই জ্ঞান বলা হয়েছে, যাকে বচনে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ 'জ্ঞান' মানেই বাচনিক জ্ঞান।
বাচনিক জ্ঞানের শর্তঃ
দর্শনে জ্ঞান বলতে বাচনিক জ্ঞানকে বোঝায়। তবে জ্ঞানের যখন কোন বিষয় থাকে এবং বিষয়কে বচনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন সেই জ্ঞানকে বাচনিক জ্ঞান বলা হয়। আর বিখ্যাত দার্শনিক জন হস্পারস্ বচ্চনের তিনটি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন আর সেই তিনটি শর্ত হলো-
প্রথম শর্তঃ জ্ঞানের প্রথম শর্ত হল- আমরা যে ব্যাপারটিকে জানি বলে দাবি করি, সেই ব্যাপার প্রকৃতই সত্য হবে। অর্থাৎ জ্ঞান হবে সত্য ব্যাপারের জ্ঞান। আমি জানি যে 'বরফ ঠান্ডা'- এখানে ব্যাপারটি হল 'বরফ ঠান্ডা' এবং ব্যাপারটি প্রকৃত সত্য বলে এই ব্যাপার সম্বন্ধে আমার যে জ্ঞান তা-ও সত্য হয়।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ভিডিও, সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON"
YOUTUBE CHANNEL)
দ্বিতীয় শর্তঃ জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে যে, ব্যাপারটি কেবল সত্য হবে না, ব্যাপারটি যে সত্য সে দিক থেকে আমাদের বিশ্বাসও থাকতে হবে। এখানে বিশ্বাস করাটা জানার একটা অংশ রূপে কাজ করে। 'আমি জানি যে P'- কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে P-এমন জ্ঞান সত্য নয়।
তৃতীয় শর্তঃ আমরা দেখেছি যে, জ্ঞান হওয়ার জন্য সত্য বিশ্বাসই যথেষ্ট নয়। এই বিশ্বাসের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণ বা যুক্তি থাকবে। এই যুক্তি প্রমাণ হল জ্ঞানের তৃতীয় শর্ত। তবে -
যে বিশ্বাস যুক্তি বা প্রমাণের দ্বারা সমর্থিত হয় না তাকে জ্ঞান বলা যায় না। যেমন একটি মুদ্রার কোন কোন নিক্ষেপে সোজা দিক উঠবে তা অনুমান করতে পারলে সেই অনুমান ঠিক হবে এই বিশ্বাস কোন প্রমাণের দ্বারা সমর্থিত নয়।
তাই এই বিশ্বাসকে জ্ঞান বলা যায় না। কিন্তু মুদ্রার প্রতিটি নিক্ষেপ লক্ষ্য করে এবং প্রত্যেকবার কীভাবে কীভাবে মুদ্রাটিকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে তা ভালোভাবে দেখে যদি বিশ্বাস করা হয় যে, পর্যবেক্ষিত দৃষ্টান্ত অনুযায়ী মুদ্রার নিক্ষেপ হলে সোজা দিক উঠবে, এই বিশ্বাস প্রমানের দ্বারা সমর্থিত হয় এবং এরকম বিশ্বাসকে জ্ঞান বলা যাবে।
সুতরাং আমরা জ্ঞানের মোট যে তিনটি শর্ত পাই সেগুলি হলো-
১) যে ব্যাপারটি আমরা জানবো তা প্রকৃত সত্য হতে হবে।
২) সত্য ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস থাকবে। এবং
৩) ওই বিশ্বাস কিছু প্রমাণ বা যুক্তির দ্বারা সমর্থিত হবে।
Comments
Post a Comment