Skip to main content

ছাত্রকে মনোযোগী করার উপায় বা শর্তগুলি কি? আলোচনা করো।

 আমরা জানি শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষার্থীর যদি পাঠ্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে তবে সে ওই বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হবে। আর বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। বিখ্যাত মনোযোগী হার্বাট বলেন -

       "শিক্ষকের প্রধান কাজ হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ গড়ে তোলা।"

আগ্রহের উপর ভিত্তি করেই শিক্ষককে শিক্ষা দেওয়া উচিত। কারণ পাঠের প্রতি আগ্রহই শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে শিক্ষার্থীকে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তাই শিক্ষার্থীকে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শিক্ষককে নিম্ন  বর্ণিত বিষয়ের সচেতন থাকতে হবে --

১) প্রাথমিক স্তরে শিশুর মনোযোগ ইচ্ছা নিরপেক্ষ থাকে। প্রধানত তারা প্রবৃত্তির তাড়নায় বিশেষ বিশেষ বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয়। তবে এই সময়ে শিশু মনে কৌতুহল, আত্ম প্রতিষ্ঠা  প্রভৃতি বিষয়গুলি খুব প্রবল থাকে। আর এই স্তরে শিশু যেসব বিষয় বস্তুতে স্বাভাবিক আগ্রহী হয় সেইগুলিকে কেন্দ্র করেই তার শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।


২) বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু মনের মধ্যে ইচ্ছা মনোযোগ যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে শিক্ষককে নজর রাখতে হবে। এর পাশাপাশি শিশুদেরকে বিমূর্ত ধারণার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে বিশেষ সেন্টিমেন্ট ও আদর্শ। পরবর্তী সময়ে শিশু মনে আদর্শের বিকাশ হলে তার মনের মধ্যে স্বত:স্ফূর্ত  মনোযোগ দেখা দেবে।

৩) শিশু মনের মধ্যে মনোযোগের পরিসর অত্যন্ত সীমিত। সুতরাং শিশুর পাঠ্যপুস্তক বা পাঠ্যবস্তু যাতে দীর্ঘ বা বড় না হয় সেদিকে কঠোরভাবে নজর রাখতে হবে। প্রয়োজন বোধে দীর্ঘ বিষয় বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে পড়াতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।

৪) সব শিক্ষার্থীর মনোযোগ দেওয়ার সামর্থ্য এক বা সমান নয়। মনোযোগের চঞ্চলতা এবং পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে শিক্ষকের ধারণা থাকা দরকার। সুদীর্ঘ বিষয়বস্তু অল্পবয়সী শিশুদের জন্য নির্বাচন করা অনাবশ্যক। শ্রেণিকক্ষে মাঝে মাঝে পাঠের মধ্যে বিরতি রাখতে হবে মনোযোগ বৃদ্ধি করার জন্য।

৫) মনোযোগের নির্ধারক গুলিকে সঠিক সময়ে কাজে লাগাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে পাঠ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে অভিনবত্ব, স্পষ্টতা এই সকল বৈশিষ্ট্য যাতে থাকে। শুধু তাই নয় শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদনের সময় কঠিন বিষয়গুলি পুনরাবৃত্তি করবেন।

৬) শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের জ্ঞান মূলক, চরিত্রের গঠনমূলক পুস্তক পাঠে আগ্রহী করে তুলবেন। পাশাপাশি শিক্ষক, বিদ্যালয়, সহপাঠীদের প্রতি সেন্টিমেন্ট তৈরি হয় তার জন্য শিক্ষক মহাশয় নানান প্রকার কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।

৭) শিক্ষার্থীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কঠিন, দুরূহ,নীরস বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয় সে বিষয়ে শিক্ষক অবশ্যই নজর রাখবেন। পাশাপাশি তিনি সচেষ্ট থাকবেন সংকল্প ও ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের দ্বারা তাদের মনোযোগের উপর কর্তৃত্ব জন্মায়।

৮) শিক্ষক সফল শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপহারের ব্যবস্থা করলে তাদের পাঠগ্ৰহনের প্রতি আগ্রহ বা মনোযোগ সৃষ্টি হয়।

৯) পাঠ্য বিষয়কে বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থাপিত করলে শিক্ষার্থীর মনে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

১০) শ্রেণিকক্ষের মধ্যে প্রজেক্ট মেথড, ডালটন প্লান ও বিভিন্ন প্রকার কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে। আর এই সকল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।

---------------------------------------------------------------------

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...