আমরা জানি শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিক্ষার্থীর যদি পাঠ্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে তবে সে ওই বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হবে। আর বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। বিখ্যাত মনোযোগী হার্বাট বলেন -
"শিক্ষকের প্রধান কাজ হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ গড়ে তোলা।"
আগ্রহের উপর ভিত্তি করেই শিক্ষককে শিক্ষা দেওয়া উচিত। কারণ পাঠের প্রতি আগ্রহই শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে শিক্ষার্থীকে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তাই শিক্ষার্থীকে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শিক্ষককে নিম্ন বর্ণিত বিষয়ের সচেতন থাকতে হবে --
১) প্রাথমিক স্তরে শিশুর মনোযোগ ইচ্ছা নিরপেক্ষ থাকে। প্রধানত তারা প্রবৃত্তির তাড়নায় বিশেষ বিশেষ বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয়। তবে এই সময়ে শিশু মনে কৌতুহল, আত্ম প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি বিষয়গুলি খুব প্রবল থাকে। আর এই স্তরে শিশু যেসব বিষয় বস্তুতে স্বাভাবিক আগ্রহী হয় সেইগুলিকে কেন্দ্র করেই তার শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।
২) বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু মনের মধ্যে ইচ্ছা মনোযোগ যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে শিক্ষককে নজর রাখতে হবে। এর পাশাপাশি শিশুদেরকে বিমূর্ত ধারণার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুদের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে বিশেষ সেন্টিমেন্ট ও আদর্শ। পরবর্তী সময়ে শিশু মনে আদর্শের বিকাশ হলে তার মনের মধ্যে স্বত:স্ফূর্ত মনোযোগ দেখা দেবে।
৩) শিশু মনের মধ্যে মনোযোগের পরিসর অত্যন্ত সীমিত। সুতরাং শিশুর পাঠ্যপুস্তক বা পাঠ্যবস্তু যাতে দীর্ঘ বা বড় না হয় সেদিকে কঠোরভাবে নজর রাখতে হবে। প্রয়োজন বোধে দীর্ঘ বিষয় বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে পড়াতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৪) সব শিক্ষার্থীর মনোযোগ দেওয়ার সামর্থ্য এক বা সমান নয়। মনোযোগের চঞ্চলতা এবং পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে শিক্ষকের ধারণা থাকা দরকার। সুদীর্ঘ বিষয়বস্তু অল্পবয়সী শিশুদের জন্য নির্বাচন করা অনাবশ্যক। শ্রেণিকক্ষে মাঝে মাঝে পাঠের মধ্যে বিরতি রাখতে হবে মনোযোগ বৃদ্ধি করার জন্য।
৫) মনোযোগের নির্ধারক গুলিকে সঠিক সময়ে কাজে লাগাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে পাঠ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে অভিনবত্ব, স্পষ্টতা এই সকল বৈশিষ্ট্য যাতে থাকে। শুধু তাই নয় শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদনের সময় কঠিন বিষয়গুলি পুনরাবৃত্তি করবেন।
৬) শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের জ্ঞান মূলক, চরিত্রের গঠনমূলক পুস্তক পাঠে আগ্রহী করে তুলবেন। পাশাপাশি শিক্ষক, বিদ্যালয়, সহপাঠীদের প্রতি সেন্টিমেন্ট তৈরি হয় তার জন্য শিক্ষক মহাশয় নানান প্রকার কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।
৭) শিক্ষার্থীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কঠিন, দুরূহ,নীরস বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয় সে বিষয়ে শিক্ষক অবশ্যই নজর রাখবেন। পাশাপাশি তিনি সচেষ্ট থাকবেন সংকল্প ও ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের দ্বারা তাদের মনোযোগের উপর কর্তৃত্ব জন্মায়।
৮) শিক্ষক সফল শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপহারের ব্যবস্থা করলে তাদের পাঠগ্ৰহনের প্রতি আগ্রহ বা মনোযোগ সৃষ্টি হয়।
৯) পাঠ্য বিষয়কে বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থাপিত করলে শিক্ষার্থীর মনে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
১০) শ্রেণিকক্ষের মধ্যে প্রজেক্ট মেথড, ডালটন প্লান ও বিভিন্ন প্রকার কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে। আর এই সকল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।
---------------------------------------------------------------------
Comments
Post a Comment