Skip to main content

রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা

 .            .রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা

                            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

      .              .  ( চতুর্থ সেমিস্টার,মিল)


প্রশ্ন: রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা গল্পের রামকানাইয়ের চরিত্র বা তাঁর নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বা গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।।


ভূমিকা: আলোচনার শুরুতেই বলে  রাখি যে- গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে একটি পরিবারের পারিবারিক চিত্র অংকিত করেছেন। আর সেই চিত্রে আমরা দেখি রামকানাই তার দাদা গুরুচরণের কথামতো তার সমস্ত সম্পত্তি স্ত্রী বরদাসুন্দরী র নামে উইল করে দেন।আর এই উইল নিয়েই রামকানাই এর পরিবারে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। কারণ রামকানাইয়ের স্ত্রীর আশা ছিল যে গুরুচরণের সম্পত্তির উইলটি তার পুত্র নবদ্বীপ কে করে দেবেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তবে রামকানাই ইচ্ছা করলেই সেটা করে নিতে পারতেন ।কিন্তু রামকানাই সেটা করেননি। নিজের ছেলের নামে না করাতেই তাদের সংসারে বিবাদ শুরু হয়। তবে---

        রামকানাই সংসারে অশান্তির কারণেই তিনি কাশি গমন করেন। অতঃপর তার অনুপস্থিতিতে তারই পুত্র নবদ্বীপ নকল উইল করে আদালতে জমা দেন। শুরু হয় আদালতে মামলা। সেই মামলা নিষ্পত্তির জন্য রামকানাই কে কাশি থেকে ডেকে আনা হয়। আদালতের বিচারের দিনে রামকানাই  পুত্রের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করেন। অতঃপর রামকানাই এর মৃত্যু হয় এবং সকলের সামনে সত্য ঘটনাটি উপস্থাপিত হয়।তবে----

        আলোচ্য গল্পে রামকানাই কে সত্যবাদী আদর্শবাদী এবং দুষ্টের দমন কারী হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে ।আর এখানেই রামকানাইয়ের নামের মধ্যে একটা ব্যঞ্জনা প্রকাশ পেয়েছে। গল্পের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে রামকানাই কে নির্বোধ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। কিন্তু তারমধ্যে একটা গোপন সাহসিকতা ছিল ,।যেটি তিনি আদালতে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। আসলে রামকানাইয়ের চরিত্রটি টাইপ চরিত্র। এখানে তাকে মেরুদণ্ডহীন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। শুধু তাই নয় এই চরিত্রটি একটি ভীতু চরিত্র হলেও তারমধ্যে লালসা বোধ জাগ্রত ছিল ।সেটি উইল লেখার সময় দেখা গিয়েছিল।যে সময়ে তার কলম চলছিল না। আর সেদিন----

               দাদা গুরুচরণ কে সম্মান জানিয়ে, ভালোবাসা প্রদর্শন করে তারই কথা মত তার সম্পত্তির উইলটি লেখে রামকানাই। তবে ইচ্ছা করলে তিনি নিজের সন্তানের নামে উইলটি করে নিতে পারতেন ।কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ তিনি সত্যের কাছে ,বিবেকের কাছে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাননি। তাই তিনি লোপকে সংবরণ করে সত্যকে,ভালোবাসাক সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে রামকানাইয়ের প্রতিবাদী চরিত্রটি আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আর এখানেই রামকানাই কে বলতে শুনি----

      " দাদা তার নিজের ইচ্ছায় উইল করে 

         গেছেন এতে তার কিছু করার নেই।"

           

                এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রী রামকানাইকে নির্বোধ হিসাবে চিহ্নিত করেন।কারণ সেই ইচ্ছা করলেই দাদার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের মনস্কামনা পূর্ণ করার অভিপ্রায়ে পুত্রের নামে সম্পত্তি লিখতে পারতেন। কিন্তু করেন নি বা লেখেনি উইলটি। তবে অপুত্রক দাদার যাবতীয় সম্পত্তির মালিক একমাত্র নবদ্বীপ একথা মনে করেন তারই স্ত্রী। তাই রামকানাইয়ের স্ত্রী মনে করে তার পুত্র নবদ্বীপ বঞ্চিত করানো হয়েছে । আর আদালতের বিচারের ঠিক আগের দিন রামকানাই ভাবলেন তিনি প্রকৃতই চক্রান্তের শিকার হয়েছেন যার ফলে তাঁকে কাশি থেকে ডেকে আনা হয়েছে। যে ডাক এর মধ্যে ছিল লোভ লালসা কামনা বাসনা। ছিলনা স্বামী হারানোর যন্ত্রণা।

      পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে- রামকানাইয়ের সত্য,সততা, প্রতিবাদী হওয়ার জন্য তারই বৌদি বরদাসুন্দরী স্বামী গুরু চরণের সম্প্রতি ফিরে পেলেন। তবে রামকানাই কে আমরা কখনোই নির্বোধ বলতে পারিনা। তবুও গল্পটিতে রামকানাই কে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা নামে। আসলে রামকানাই নিঃসন্তান বৌদি বরদাসুন্দরী কে ঠকাতে চান নি। এখানেই রামকানাই এর উন্নত মানসিকতার, চরিত্রের পরিচয় আমরা পাই। যে চরিত্রের মধ্যে দিয়ে আমাদের এই মুখোশধারী সমাজ আমাদের সামনে উঠে এসেছে । তবে প্রতিবাদ শেষ অস্ত্র, শ্রেষ্ঠ অস্ত্র ।যেটি রামকানাই প্রমাণ করেছেন।তাই এই রামকানাই চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যে, বাংলা ছোটগল্পে অনন্যসাধারণ চরিত্র।আর ছোটগল্প নামকরণ হিসাবে যথার্থই সার্থকতা পেয়েছে।।

                               শেষের কবিতা সুন্দরবন ইউটিউব চ্যানেল।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প