Skip to main content

ন্যায় দর্শন মতে প্রমা ও প্রমাণ কি আলোচনা কর।

         ভূমিকা - প্রমা কথাটির অর্থ হলো যথার্থ বা উৎকৃষ্ট বা প্রকৃষ্ট জ্ঞান। অর্থাৎ প্রমা= প্র+মা। যেখানে প্র= যথার্থ বা প্রকৃষ্ট , আর মা=জ্ঞান। অর্থাৎ প্রমা কথাটির অর্থ দাঁড়ায় যথার্থ বা উৎকৃষ্ট জ্ঞান। এই জ্ঞান দুই প্রকার- অনুভব ও স্মৃতি।


     'অনুভব' হলো নিরপেক্ষ জ্ঞান। এই জ্ঞান বিষয় থেকে উৎপন্ন হয়। আর 'স্মৃতি' হলো সাপেক্ষ জ্ঞান। এই জ্ঞান বিষয়ের সাপেক্ষ থেকে উৎপন্ন হয়। সুতরাং ন্যায় মতে প্রমা হল অনুভব এবং যথার্থ অনুভব। আর সেই মত অনুযায়ী--

              ১) প্রমা হলো অনুভব।

            প্রমা হল সেই অনুভব, যা বস্তু বা বিষয়ের অনুরূপ হবে। আর সেই কারণে ঘট প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রেই ঘঠত্ব বিশিষ্ট ঘটের অনুভব হবে।

          ২) প্রমা হলো বিপর্যয়শূন্য অনুভব।

         বিপর্যয় হলো ভ্রান্তি বা মিথ্যা জ্ঞান। যে জ্ঞানে দড়িতে সাপের অনুভব হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আসলে সাপ নেই, সাপের অনুভব হবে। যেটির ভ্রান্তির নাম বিপর্যয়। তবে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে এই বিপর্যয় থাকে না।

            ৩) প্রমা হলো সংশয়শূন্য অনুভব।

             সংশয়শূন্য অনুভব হলো, দূরের পর্বতে যা দেখা যাচ্ছে , তা ধুম না ধুলিঝড়? আর এ সম্পর্কে যদি কোন সংশয় থাকে তাহলে যে অনুভব হবে তাকে কখনো প্রমা বলা যাবে না।

            ৪) প্রমা হলো অনধিগত অনুভব।

          অনধিগত মানে হলো যা পূর্ব জ্ঞাত নয়, তবে তা অবশ্যই নতুন জ্ঞান। আর এই নতুন জ্ঞান প্রমা বা যথার্থ অনুভবে অবশ্যই থাকবে।

          ৫) প্রমার লক্ষণ হল সফল প্রবৃত্তি

         প্রমা হলো সেই অনুভব, যা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সাফল্য আনে। আর সেই সাফল্য হল সফল প্রবৃত্তি। যেমন কোন একটি বস্তুকে মিষ্টি হিসাবে (অনুমান করে) খাওয়ার পর সেই বস্তুটি সত্যই মিষ্টি হয় তাহলে সফল প্রবৃত্তির দ্বারা আমার অনুভবের যথার্থতা প্রমাণিত হয়।


•প্রমানঃযথার্থ জ্ঞানের করণ কে প্রমাণ বলে। যেখানে করণ শব্দটির অর্থ হলো অসাধারণ কারণ। আসলে প্রমা একটি কার্য। আর সেই কার্যের নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে যে কারণটি অসাধারণ কারণ তাকে করণ বা প্রমাণ বলে। এখানে অসাধারণ কারণ বলতে একটি বিশেষ প্রমার একটি বিশেষ কারণকে বোঝানো হয়েছে। যেমন----

           প্রত্যক্ষ একটি প্রমা বা যথার্থ জ্ঞান। এর বিশেষ কারণ হলো ইন্দ্রিয়- বিষয়- সন্নিকর্ষ। অর্থাৎ শুধু প্রত্যক্ষেই প্রয়োজন হয়। অনুমিতি ইত্যাদি অন্য প্রমায় হয় না।অথএব--

        ইন্দ্রিয়- বিষয়- সন্নিকর্ষ=প্রত্যক্ষের অসাধারণ কারণ=প্রত্যক্ষের করন বা প্রমাণ। আবার ---

এই অসাধারন কারণ আবার দুই প্রকার- 

            ক)চরম কারণ 

            খ) ব্যাপার বিশিষ্ট কারণ।যেখানে---


১) প্রমা একটি কার্য। এই কার্যের নানা কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে যে কারণটি ঠিক, ঠিক তার পরেই কার্য হিসাবে প্রমার উৎপত্তি হয়,তাকে ওই প্রমার চরম কারণ বা প্রমাণ বলে।

২) ব্যাপার হল কারণ এবং কার্যের মধ্যবর্তী ঘটনা। যে কারণ এই মধ্যবর্তী ঘটনা বা ব্যাপার বিশিষ্ট হয়ে বা ব্যাপারে সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্য উৎপাদন করে, তাই হল করণ।

      পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে-প্রমা হল যথার্থ জ্ঞান। আর ন্যায় দর্শনে যথার্থ অনুভবকে প্রমা বলে। অপরদিকে প্রমা বা যথার্থ অনুভবে কারণকে প্রমাণ বলা হয়। শাস্ত্রীয় ভাষায়-

         " যা প্রমান করণ, তাই প্রমাণ।"

যেখানে প্রমা কথাটির অর্থ যথার্থ বা উৎকৃষ্ট বা প্রকৃষ্ট জ্ঞান। আবার অপরদিকে জ্ঞানের যাবতীয় উৎস প্রমাণের অন্তর্গত। আর সেখানে প্রমাণ বলতে একমাত্র প্রত্যক্ষ প্রমাণকেই বোঝানো হয়।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...