প্রশ্ন: চার্বাক নীতিতত্ত্ব বা সুখতত্ত্ব কি? চার্বাক নীতিতত্ত্ব কি গ্রহণযোগ্য? আলোচনা কর।(B.A& XI)
চার্বাক নীতিতত্ত্ব: চার্বাকদের মতে দেহসর্বস্ব তীব্রতম ইন্দ্রিয়সুখ মানুষের চরম কাম্য বিষয় এবং পরম পুরুষার্থ। তাই যে কাজ ইন্দ্রিয় সুখলাভে সহায়ক, সেই কাজ করা উচিত এবং যে কাজ সহায়ক নয় সেই কাজ মন্দ,সেই কাজ করা অনুচিত। অর্থাৎ--
কাজের ভালো-মন্দ উচিত-অনুচিত নির্ণয় করা যায় যে মানদন্ডের সাহায্যে তাকে বলা হয় নৈতিক মানদণ্ড। তবে চার্বাকরা প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণ বলে স্বীকার করেন ।তাই তাঁরা ঈশ্বর, আত্মা, মোক্ষ ,ধর্ম ,পাপ স্বীকার করেন না। তাঁরা কামকে পরমপুরুষার্থ বলে স্বীকার করেন। চার্বাকদের এই পরম সুখ লাভের তত্ত্বই হলো নীতি তত্ত্ব বা আত্মসুখতত্ত্ব।
০চার্বাক নীতিতত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা (সমালোচনা)০
১) ভুল নীতিতত্ত্ব: চার্বাক নীতিতত্ত্ব বা সুখলাভ তত্ত্ব ভুল নীতি বা ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। সেকারণে তাদের তত্ত্ব সঠিক নয়। তাঁরা মনে করেন প্রত্যক্ষ একমাত্র প্রমাণ, অনুমান প্রমান নয়।এ তত্ত্ব মোটেই সত্য নয়। কেননা চার্বাক ছাড়া সকল ভারতীয় দর্শন অনুমান কে প্রমান বলে স্বীকার করেছেন।এই ভুল তত্ত্বের ভিত্তিতে চার্বাক নীতিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত বলে তাদের নীতিতত্ত্ব ভুল হিসাবে পরিগণিত।
২) সার্বিক মতামত নয়: নৈতিক আদর্শ সার্বিক ও আবশ্যিক হবে। কিন্তু ইন্দ্রিয়সুখ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। কারণ নরহত্যায় সুখ পান নরখাদক, মানবসেবায় সুখ পান মানবপ্রেমিক। সুতরাং ইন্দ্রিয়সুখ সার্বিক নয়, নৈতিক আদর্শ বা মানদন্ড হতে পারে না।
৩) একদেশদর্শী মতামত: চার্বাক নীতিতত্ত্ব আত্মসুখবাদ,পরসুখবাদ নয়। আত্মসুখবাদ স্বার্থপরতার পরিচয় বহন করে।তার ফলে পরিবার,সমাজ, বন্ধুত্ব সব কিছুই নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ অসামাজিক হয়ে পড়বে। কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব হওয়ায় তার মধ্যে পরার্থপরতা থাকবে।তাই সে পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করবেই।তাই তাদের আত্মসুখবাদ একদেশদর্শী,যা গ্রহণযোগ্য নয়।
৪) মানসিক সুখ অস্বীকার: আত্মসুখ পরম আকাঙ্ক্ষার বিষয় হলে মানুষ পশুর মতো আচারণ করবে।যেটি কখনো হতে পারে না। কারণ মানুষের মন, বুদ্ধি, নৈতিক জীবন,আধ্যাত্মিক জীবন আছে- যা বাস্তব সত্য। কারণ মানুষ দেহসুখ অপেক্ষা প্রেম, ভালোবাসা, মানসিক সুখ কামনা করে,মোক্ষ কামনা করে। সুতরাং চার্বাক নীতিতত্ত্ব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে- আধুনিককালে সুশিক্ষিত চার্বাকরা ধূর্ত চার্বাকদের দৈহিক সুখ বর্জন করে তারা মানসিক সুখ অধিকতর কাম্য বলে মনে করেন। তারা আরো মনে করেন গোষ্ঠীর সুখ অধিক কাম্য ব্যক্তি সুখ অপেক্ষা। ফলে চার্বাকদের আত্মাসুখবাদ পরবর্তীতে সূক্ষ সংযত পরসুখবাদে পরিণত হয়েছে।
সমরেশ স্যার
শেষের কবিতা।
Comments
Post a Comment