সামাজিক পরিবর্তন কাকে বলে?
উত্তর -আমরা জানি যে-সমাজবিজ্ঞানের একটি আলোচ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সামাজিক পরিবর্তন। আর এই মানব সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। মে পরিবর্তন প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পরিলক্ষিত।আর--
সমাজ পরিবর্তনশীল বলেই আদিম সমাজ থেকে ক্রমবিকাশের ধারায় আমাদের বর্তমান বা আধুনিক সত্য অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে। তবে সমাজ কোন বস্তু নয়, সমাজ হলো মানুষের পারস্পরিক এক সম্পর্কের বেড়াজাল। আর সেই সম্পর্কের মধ্যে দেখা যায় গতিশীলতা ও পরিবর্তন মানুষের আন্ত:মানবিক সম্পর্কের মধ্যে যে গতিশীলতা পরিলক্ষিত হয় তাই আসলে সামাজিক পরিবর্তন।
© সামাজিক পরিবর্তনের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ বা ধরন আলোচনা করো।
উত্তর - সামাজিক পরিবর্তন বলতে কিছু পরিবর্তিত ক্রিয়া-কলাপকে বোঝায়, যেগুলি সামগ্রিকভাবে সমাজের রূপ ও পরিকাঠামোর মধ্যে পরিবর্তন আনে। সামাজিক পরিবর্তনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
১) রৈখিক পরিবর্তন।
২) বৃত্তাকার আবর্তনমূলক পরিবর্তন।
১) রৈখিক পরিবর্তন:- কোন না কোনভাবে সমাজ, ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত করে। যেমন জ্ঞানের প্রসার, উৎপাদন শক্তির বিকাশ, সমাজের আয়তন ও জটিলতার ক্রমবর্ধনশীলতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিস্তার ইত্যাদি। আর এর মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সমাজের পরিবর্তনের তাৎপর্যগুলি ধরা হয়েছে।
২) বৃত্তাকার আবর্তনমূলক পরিবর্তন:- আমাদের সমাজ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে- এই সমাজ চক্রাকারে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হয়। সেই সমাজে সবাই যখন শুধু ইন্দ্রগ্রাহ্য তথ্যকে মূল্য দেয়, ঠিক তখনই সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাটি ইন্দ্রিয়পর যখন বিশ্বাস থাকে যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্যের আড়ালে গভীর বাস্তবতার সন্ধান পাওয়া সম্ভব। আর তখন সেটি হলো আদর্শায়িত। আর এই যুক্তি ও যুক্তিশীলতা গুরুত্ব পায় তখনই যখন তা বাস্তববাদী সামাজিক ব্যবস্থা হয় ।এইভাবে সভ্যতার বিকাশ, গতিরোধ ও পতন চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
© সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষার ভূমিকা বা শিক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তনের সম্পর্ক:-
উত্তর - মানব সমাজ স্থিতিশীল, অচল বা অনড় নয় গতিশীল।সামাজিক প্রক্রিয়া সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে সাহায্য করে। আধুনিককালের শিক্ষাবিদগণ শিক্ষাকে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বলে চিহ্নিত করেন। সেই জন্য তারা মনে করেন যে- শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব। তাই সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষার ভূমিকা হলো-
১) বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে সমাজে এসেছে শিল্প বিপ্লব, সবুজ বিপ্লব, নগরায়ন, বিশ্বায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন। আর এসবের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য উপযুক্ত দুঃখ নেতা ও কর্মী একান্ত আবশ্যক শিক্ষাই পারে এই প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে।
২) সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আধুনিক শিক্ষা মানুষের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সহায়তা করে। যেমন মানুষের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ফলে অস্পৃশ্যতার পাপ থেকে আজ ভারতীয় সমাজ মুক্তি লাভ করেছে।
৩) শিক্ষা মানুষের অভিযোজন এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির তুলনায় একজন শিক্ষিত ব্যক্তি অনেক সার্থকভাবে বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি সাধন করতে সক্ষম হয়।
৪) সমাজ পরিবর্তনে নারী শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। নারী জাতিকে শিক্ষার প্রাঙ্গণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে সমাজের উন্নতি অসম্ভব। শিক্ষার দ্বারাই এই প্রত্যয় জন্মায়।
৫) শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ উন্নত মানের মূল্যবোধের অধিকারী হয়, যা সামাজিক পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। সমাজই তার প্রয়োজনে শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। যেখানে ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য সমাজই বিধিবদ্ধ ও দূরশিক্ষা এবং মুক্তশিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং পরিচালনা করছে। বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মত ভারতেও সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার অপরিহার্য ভূমিকা আজও স্বীকৃত।
Comments
Post a Comment