Skip to main content

ন্যায়দর্শন মতে লৌকিক এবং অলৌকিক প্রত্যক্ষ আলোচনা করো।

 প্রশ্নঃ ন্যায়মতে লৌকিক এবং অলৌকিক প্রত্যক্ষ আলোচনা করো।


প্রত্যক্ষঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় বিষয় সন্নিকর্ষ থেকে যে জ্ঞান উৎপন্ন হয় তা যথার্থ। আর এরূপ জ্ঞানকে বলা হয় প্রত্যক্ষ। এই জ্ঞান দু''রকমের- সাক্ষাৎ এবং অসাক্ষাৎ।তবে সন্নিকর্ষের এই তারতম্য অনুসারে প্রত্যক্ষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়--

       ১) লৌকিক প্রত্যক্ষ এবং 

        ২) অলৌকিক প্রত্যক্ষ।

১) লৌকিক প্রত্যক্ষঃ যখন বিষয়ের সাথে ইন্দ্রিয় সংযোগ হয় এবং সেই সংযোগের ফলে যে প্রত্যক্ষ হয় তাকেই লৌকিক প্রত্যক্ষ বলা হয়। লৌকিক প্রত্যক্ষ এর ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের সাথে বিষয়ের যে লৌকিক সন্নিকর্ষ ড়য় তা ৬ প্রকার- সংযোগ, সংযোগ সমবায়, সংযুক্ত সমবেত সমবায়, সমবায়, সমবেত সমবায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যভাব।তবে-

        লৌকিক প্রত্যক্ষ আবার দুই প্রকার। বাহ্য প্রত্যক্ষ এবং মানস প্রত্যক্ষ। বাহ্যইন্দ্রিয় পাঁচটি-চক্ষু কর্ণ নাসিকা জ্বিহা এবং ত্বক। এই পাঁচটি ইন্দ্রের সাহায্যে যখন বাইরের জগতের কোন বিষয় বা বস্তুর সংযোগ স্থাপিত হয় তখন তাকে বাচ্চু প্রত্যক্ষ বলে অপরপক্ষে-

          চিন্তা অনুভূতি ইচ্ছা কামনা বাসনা মানসিক ক্রিয়া প্রক্রিয়ার সাথে যখন মনের সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তাকে মানুষ প্রত্যক্ষ বলে সুতরাং--

          নৈয়ায়িকদের মতে ছয় রকমের লৌকিক প্রত্যক্ষ হতে পারে-

           চাক্ষুষ(Visual ),     

           শ্রৌত্র(Auditory), 

           রাসন(Gustatory),

           ঘ্রানজ(Olfactory), 

           স্পার্শন(Tactual ) এবং 

           মানস(Internal) ।

আবার লৌকিক প্রত্যক্ষকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ,নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ এবং প্রত্যাভিজ্ঞা।


অলৌকিক প্রত্যক্ষঃ ইন্দ্রিয়ের সাথে বিষয়ের যখন সাধারণ সন্নিকর্ষ হয় না, কোন অসাধারণ উপায়ে বা অলৌকিকভাবে সেই বিষয়কে আমরা প্রত্যক্ষ করি তখন তাকে অলৌকিক প্রত্যক্ষ বলে। আর এরূপ প্রত্যক্ষে বিষয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের সাক্ষাৎ সম্বন্ধ থাকে না, বিষয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের অলৌকিক বা অসাধারণ সন্নিকর্ষ বা সংযোগ ঘটে থাকে। তাই এরূপ প্রত্যক্ষকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়--

            ১) সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ ।

             ২) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ এবং 

             ৩) যোগজ প্রত্যক্ষ।

১) সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষঃ যে ধর্ম একটি জাতির অন্তর্গত প্রত্যেক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে বর্তমান এবং যে ধর্মের জন্য একটি জাতিকে অপর জাতি হতে পৃথক করা যায় তাকে সামান্য ধর্ম বলে। 'মনুষ্যত্ব' এই সামান্য ধর্মটি মানবজাতির অন্তর্গত প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। সামান্য ধর্ম প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে কোন জাতিকে প্রত্যক্ষ করা হল সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ। মনুষ্যত্ব এই সামান্য ধর্মকে আমরা সাক্ষাৎভাবে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মানুষের মধ্যে প্রত্যক্ষ করি।


২) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষঃ কোন বিশেষ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বস্তুর বিশেষ ধর্মকে প্রত্যক্ষ করবার সময় সেই ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বস্তুর অন্য কোন ধর্ম প্রত্যক্ষ করাকে জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ বলে। 

          জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ পূর্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। ত্বক ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বরফ ঠান্ডা আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। আর এই প্রত্যক্ষ আমরা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও করবো।

৩) যোগজ প্রত্যক্ষঃ যোগীরা অলৌকিক শক্তির প্রভাবে এবং সজ্ঞার সাহায্যে অতীত, ভবিষ্যৎ, দূরবর্তী এবং অতি সূক্ষ্ম সকল বস্তুকে সমানভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এই জাতীয় প্রত্যক্ষকে বলা হয় যোগজ প্রত্যক্ষ। আসলে এই প্রত্যক্ষে বস্তুর সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের কোন সংযোগ থাকে না বলে এগুলি বলে অলৌকিক।এই যোগজ প্রত্যক্ষ দুই প্রকার-

   ১) যুক্ত বা সিদ্ধ যোগীদের প্রত্যক্ষ।

   ২) যুজ্ঞান নিযুক্ত যোগীদের প্রত্যক্ষ।

           বৈদান্তিকগণ নৈয়ায়িকদের সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ ও জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষের সত্যতা স্বীকার না করলেও,যোগজ প্রত্যক্ষের সত্যতা স্বীকার করেন, কারণ যোগজ প্রত্যক্ষ শ্রুতি প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। যোগজ প্রত্যক্ষ বৈদান্তিকদের অপরোক্ষানুভূতির অনুরূপ।


আরও বিস্তারিত আলোচনাও সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA     

                               SUNDORBON"

                         YOUTUBE CHANNEL .

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প