প্রশ্নঃ- রুশোর "সাধারণ ইচ্ছা"General Will ) ব্যাখ্যা করো।(প্রথম সেমিস্টার, মাইনর)।
প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিদ্ রুশো মনে করেন 'সাধারণ ইচ্ছা হল ব্যক্তির ইচ্ছার সমষ্টি, যা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস।' তবে এই ইচ্ছা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের যৌথ ইচ্ছা, যে ইচ্ছা ব্যক্তিগত স্বার্থের বিপরীতে রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিফলিত করে। আসলে সাধারণ ইচ্ছা হল সর্বজনীন মঙ্গলের ইচ্ছা। মোট কথা -সাধারণ ইচ্ছা হলো ব্যাক্তির সমষ্টিগত ইচ্ছা,যা সমাজে বসবাসকৃত মানুষের মঙ্গল সাধন করে।আর সেখানে --
রুশো তাঁর “সামাজিক চুক্তি” গ্রন্থে 'সাধারণ ইচ্ছা'কে “সমাজ বা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ইচ্ছা” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে-
"প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষ স্বাধীন এবং সমান।
কিন্তু এই স্বাধীনতা এবং সাম্য প্রকৃতির দ্বারা
সুরক্ষিত নয়।"
তাই নিজেদের জীবন সুরক্ষিত রাখার কারণেই মানুষ সাধারণ ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র গঠন করে। এই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ইচ্ছাই হল সাধারণ ইচ্ছা।আর সেই ইচ্ছার কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। লক্ষণীয় সেই বৈশিষ্ট্যগুলি হলো---
প্রথমতঃ- সাধারণ ইচ্ছা হল সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। রুশো মনে করতেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হল সাধারণ ইচ্ছা। সাধারণ ইচ্ছার বাইরে কোনও ক্ষমতা রাষ্ট্রে বিদ্যমান থাকতে পারে না।
দ্বিতীয়তঃ- সাধারণ ইচ্ছা হল সকল নাগরিকের যৌথ ইচ্ছা। তবে সাধারণ ইচ্ছা হল রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের যৌথ ইচ্ছা।যা ব্যক্তিগত স্বার্থের বিপরীতে রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিফলিত করে।
তৃতীয়তঃ- সাধারণ ইচ্ছা হল সর্বজনীন মঙ্গলের ইচ্ছা। আর এই ইচ্ছাই সর্বদা জনগণের মঙ্গলসাধন করে থাকে। এদিকে থেকে বিচার করলে সাধারণ ইচ্ছার গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে আমরা দেখি --
সাধারণ ইচ্ছা বিষয়টি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে অতি শক্তিশালী করেছে। শুধু তাই নয়, এই ইচ্ছাই জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে এই সাধারণ ইচ্ছা সার্বভৌম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে যেমন, ঠিক তেমনি জনমঙ্গল সাধিত হয়েছে। তবুও এই অপার শক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আর সেই সীমাবদ্ধতা গুলি হল--
সমালোচকদের মতে-সাধারণ ইচ্ছা একটি আদর্শবাদী ধারণা, যা বাস্তবে বাস্তবায়িত করা কোনমতেই সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, তাঁরা আরও বলেন যে সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। বাস্তব জগতে সাধারণ ইচ্ছা সর্বদাই যথার্থ এবং জনগণের মঙ্গলাভিমুখী হয় না।
তাই এটি একটি অবাস্তব তত্ত্ব। সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে জনগণ তাদের সমস্ত স্বাধীনতা রাষ্ট্রের কাছে ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাস্তব জগতে তা সম্ভব নয়।আসলে এই ইচ্ছা একটি একনায়কতন্ত্রের পথ সুগম করে। সাধারণ ইচ্ছার নামে জনগণের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে রাষ্ট্র শাসকরা একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে পারে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে-রুশোর মতে, সাধারণ ইচ্ছা সর্বদাই যথার্থ এবং জনগণের মঙ্গলাভিমুখী। তাই এই ইচ্ছা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। আর সেখানে সাধারণ ইচ্ছার প্রধান উদ্দেশ্য হল- জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
আসলে রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। তাই এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এটি একটি আদর্শিক তত্ত্ব যা বাস্তব জগতে সর্বদা প্রযোজ্য হয় না বা প্রতিফলিত হয় না। তবুও এই সাধারণ ইচ্ছার গুরুত্ব অপরিসীম।
**আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL **
Comments
Post a Comment