Skip to main content

মূল্যবোধের সংজ্ঞা দাও। মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। (EducationB.A first semester, NEP, West Bengal State University)

 মূল্যবোধের সংজ্ঞা দাও। মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। (EducationB.A first semester, NEP, West Bengal State University)


মূল্যবোধঃ-

          আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, সংকীর্ণ এবং ব্যাপক অর্থে মূল্যবোধ শব্দটির ব্যবহার করা হয়। আর সেখানে সংকীর্ণ অর্থে কোন বস্তুর বিনিময় মূল্যকে আমরা মূল্য বলে থাকি। আর ব্যাপক অর্থে মানুষের আচরণধারা যেসব উপদানের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় সেটাই মূল্যবোধ। তবে-

             আধুনিককালে বিভিন্ন দার্শনিক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে মূল্যবোধের বিষয়টি নিয়ে বেশ মতবিরোধ আছে। তবে মতবিরোধ যাই থাকুক না কেন, আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে-

        ব্যক্তিজীবনের বহুমুখী বিকাশই শিক্ষার উদ্দেশ্যে। আর এই বহুমুখী বিকাশের ফলে ব্যক্তি আদর্শ জীবনের অধিকারী হয়ে গড়ে ওঠে। ব্যক্তির এই আদর্শ জীবন তিনটি মাত্রা বা তলের সমন্বয়ে গঠিত। আর সেই তিনটি মাত্রা বা তল হল-- 

                  ১)আত্মনির্ধারণ।

                  ২) আত্মোপলব্ধি। 

                   ৩)আত্মসমন্বয়। 

           এই তিন মাত্রার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি তার জীবনাদর্শকে বেছে নেয়। আধুনিক বস্তুবাদী দার্শনিকদের মতে এই তিনটি মাত্রার জাগরণ বা বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধের জাগরণ ঘটে। তবে-- 

       মনোবৈজ্ঞানিক দিক থেকে মূল্যবোধ হলো- ব্যক্তি কতগুলি জৈব মানসিক প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। আর সেই প্রবণতা গুলি হল- আগ্রহ, মনোভাব, সেন্টিমেন্ট, প্রেষণা ইত্যাদি। এগুলি বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিকশিত হতে থাকে। ব্যক্তির এই জৈব মানসিক প্রবণতাগুলি সমন্বয়ের ফলে যে সর্বশক্তি সম্পন্ন মানসিক সংগঠন গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় মূল্যবোধ। 


              মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য হলো:-

 

  ১)   মূল্যবোধের নির্দিষ্ট কোন বস্তুগত বা ধারণাগত মাধ্যমে নেই। বিভিন্ন ধারণা ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। অর্থাৎ একই মূল্যবোধের কারণে ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের আচরণ সম্পাদন করতে পারে। 

    ২) মূল্যবোধকে এক ধরনের সাধারণ ধর্মী প্রস্তুতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই প্রস্তুতি হল প্রতিক্রিয়া বা আচরণগত প্রস্তুতি। 

     ৩) মূল্যবোধ ব্যক্তির আচরণের মতো সামঞ্জস্যতা আনে। অর্থাৎ একই ব্যক্তি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে। 

    ৪) মূল্যবোধ কতগুলি আচরণ সৃষ্টিকারী জৈব মানসিক প্রবণতার সমন্বয়ে সৃষ্টি। অর্থাৎ একই মূল্যবোধ বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম। 

     ৫) মূল্যবোধ ব্যক্তির অভিজ্ঞতা নির্ভর। আবার ব্যক্তির অভিজ্ঞতার মধ্যে যেমন পার্থক্য থাকে তেমনি মূল্যবোধের দিক থেকে পার্থক্য থাকে। 

      ৬) মূল্যবোধের বিকাশ বিশেষভাবে সামাজিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে। কারণ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে মূল্যবোধ গঠনের সহায়তা করে থাকে।

      ৭) মূল্যবোধের দুটি দিক আছে। যার একটি দিক হলো তার আন্তরিক সাংগঠনিক দিক এবং অপরটি হল তার প্রকাশমান দিক। 

     ৮) মূল্যবোধের ভিত্তি প্রধানত ধর্ম ও দর্শনশাস্ত্র।যেমন- সততা, শৃঙ্খলা, দয়া প্রভৃতি শিক্ষা আমারা ধর্ম ও দর্শন থেকে পেয়ে থাকি।

     ৯) দেশ ও যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধের ধারণা পরিবর্তন হয়। 

         পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,ব্যক্তির মূল্যবোধের স্বরূপটি তার আচরণের মধ্যে প্রকাশ পায়। ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিভিন্ন আচরণ সম্পাদনের মাধ্যমে। সুতরাং ব্যক্তি জীবনের মূল্যবোধ তার আচরণের প্রকৃতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ গ্রহণ করতে পারে। আবার আধুনিক প্রয়োগবাদী দার্শনিকরা বলেন--

           "মূল্যবোধ মেঘের মতো অস্থায়ী"।

            সুতরাং আজ যা সত্য কাল তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হতে পারে। অর্থাৎ দেশ কাল পাত্র ভেদে মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটাটা স্বাভাবিক। 

ঠিক এরূপ কোন বিষয় ভত্তিক আলোচনা লোক এবং সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDARBAN" YouTube channel। আপনার যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন।


Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প