Skip to main content

ভারতীয় সংবিধানে প্রস্তাবনা স্বরূপ আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান)।

 ভারতীয় সংবিধানে প্রস্তাবনা স্বরূপ আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান)।


ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,১৯৪৯ সালে ২৬শে নভেম্বর ভারতের সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা সংযুক্ত হয়েছিল। আর সেই প্রস্তাবনাটি ১৯৪৬ সালে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনের দ্বারা কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। সেই সংবিধানে বলা সেই সংবিধানে বলা হয়েছিল যে,জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করার সাথে সাথে ভাতৃত্ববোধ প্রসারের জন্য অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সেই নিরিখে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার স্বরূপটি হলো--

১) আমরা ভারতের জনগণঃ 

          আমরা ভারতের জনগণ কথাটির অর্থ হল যে, ভারতীয় জনগণই সংবিধানের স্রষ্টা ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আর সেদিন ভারতের সংবিধান কোন বিদেশী শক্তির দ্বারা সৃষ্টি হয়নি বা পরিচালিত হয়নি।

২) সার্বভৌমঃ 

         সার্বভৌম কথাটির অর্থ হলো ভারত রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। যার অর্থ হল, অন্য কোন রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুসারে ভারত রাষ্ট্র পরিচালিত হবে না। 

৩) সমাজতান্ত্রিকঃ 

         সমাজতন্ত্র কথাটির অর্থ হল, ভারত নিজেকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে। তবে এই সমাজতন্ত্র মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্র নয়। আসলে এই সমাজতন্ত্র হলো গণতান্ত্রিক সমাজবাদ। যে সমাজবাদের গড়ে উঠবে মিশ্র অর্থনীতি। 

৪) ধর্মনিরপেক্ষতাঃ 

          ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল, ভারত কোন ধর্মের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা বা বিরোধিতা করবে না। ভারত সকল ধর্মের মানুষকে সমান দৃষ্টিতে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে। 

৫) গণতন্ত্রঃ 

           গণতন্ত্র কথাটির অর্থ হল, ভারতের নাগরিকরা বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্করা ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। আর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকে।

৬) সাধারণতন্ত্রঃ 

         সাধারণতন্ত্র কথাটির অর্থ হল, ভারতের প্রধান রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতি বংশানুক্রমিক ভাবে আসীন হন না। এই রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। 

৭) ন্যায় বিচারঃ 

          ন্যায় বিচার কথাটির অর্থ হল, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা। 

৮) স্বাধীনতাঃ 

          প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের ১৯থেকে ২২ নম্বর ধারায় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতি হয়েছে। যার ফলে প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার সম্পর্কে সদা সর্বদা সচেতন থাকেন। 

৯) সাম্য ও সৌভাতৃত্ববোধঃ 

          গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতীয় সংবিধানে ১৪ থেকে ১৮ নম্বর ধারায় সাম্যের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। আর সেখানে বলা হয় যে,বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মের মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শকে প্রসারিত করতে হবে। তবে -

             সেদিন ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার স্বরূপটি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছিল,সমালোচকরা কিন্তু বিষয়টি একটু ভিন্ন চোখে দেখলেন। আর তারা মনে করেন, ভারতীয় সংবিধান ভারতীয় জনগণের দ্বারা রচিত হয়নি। পাশাপাশি তারা আরও বলেন যে, ভারতীয় গণপরিষদ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত হয়নি,গঠিত হয়েছে ব্রিটিশ আইন দ্বারা।

                পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের স্বরূপটি সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। আর এখানে সংবিধানকে যদি মুকুটের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে প্রস্তাবনা হলো শোভা বর্ধনকারী একটি রথ বিশেষ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...