Skip to main content

অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী এবং পদমর্যাদা আলোচনা করো।

অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী এবং পদমর্যাদা আলোচনা করো।( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দ্বিতীয় সেমিস্টার, মাইনর সিলেবাস)


ভূমিকাঃ আমরা জানি যে, সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী রাজ্যের রাজ্যপাল ও মন্ত্রিসভাকে নিয়ে রাজ্যের শাসন বিভাগ গঠিত হয়। আর সেই শাসন বিভাগের প্রধান রাজ্যপাল। তবে রাজ্যপাল শাসন বিভাগের প্রধান হলেও রাজ্যের মূল কার্য পরিচালনা করেন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ। সংবিধানের ১৪৪/১ ধারা অনুসারে রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। তবে সাধারণত বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। আর সেই মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকাল পাঁচ বছর, তবে কার্যকালের পূর্বে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। রাজ্য আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা হারালে মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয় এবং সাথে সাথে সরকারেরও পতন ঘটে।

 ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ 

১) রাজ্যপালের মুখ্যপরামর্শদাতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীঃ

           রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপাল ও রাজ্য আইনসভার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। যেমন রাজ্য মন্ত্রিসভার সকল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও আইন প্রণয়নের প্রস্তাব সম্পর্কে রাজ্যপাল কে অবহিত করা। তবে রাজ্যপাল মূলত নিয়মতান্ত্রিক শাসক। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাজ্যপাল রাজ্য আইন সভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা এবং বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন।

২) মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীঃ

         ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ নম্বর ধারা অনুসারে মুখ্যমন্ত্রী হলেন মন্ত্রিসভার প্রধান নেতা বা নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মূলত রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করে থাকেন। তবে তিনি প্রয়োজনে কোন মন্ত্রীকে অপসারিত করতেও পারেন। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান এবং সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীই। তিনি সরকারের নীতি নির্ধারণ ও রূপায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অধিকারী। আসলে মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার মধ্যমণিস্বরূপ।

৩) রাজ্য আইনসভার মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা 

     মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য আইনসভার নেতা, আবার রাজ্য আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হলে তার নিম্নকক্ষ বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই রাজ্যপাল আইনসভার অধিবেশন আহ্বান স্থগিত রাখতে পারেন। আইনসভার আলোচনার বিষয়বস্তু স্থির করার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা থাকে। আইনসভায় সরকারের নীতির ব্যাখ্যা, বিরোধীদের সমালোচনার জবাব প্রভৃতির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

৪) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীঃ     

           সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন । তিনি বিধানসভার ভেতর ও বাইরে নিজের দলের ভাবমূর্তি, সংহতি প্রভৃতির প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ নজর থাকে। দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলার বজায় রাখার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব, কর্মদক্ষতা, বিচক্ষণতা, পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা তাঁকে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে দেয় এবং তাঁর দলের বিকাশ ঘটায়।

৫) জননেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীঃ 

      রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন প্রকৃত শাসক প্রধান। তিনি রাজ্যের জনগণের নেতা আর এই জননেতা হিসেবে জনসংযোগ রক্ষা করা হলো মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম ভূমিকা বা কাজ। রাজ্যের জনগণ নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পুরনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা, বিবৃতি কার্যকলাপ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ বেতার, দুরদর্শন প্রকৃতির মাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করে নিজের এবং নিজের দলের ও সরকারের পক্ষে জনমত গঠন করে থাকেন।।


পদমর্যাদাঃ

     সাংবিধানিকভাবে রাজ্যের শাসক হিসেবে রাজ্যপাল উল্লেখিত হলেও মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্যের প্রকৃত শাসক। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে তাঁর কার্য সম্পাদন করে থাকেন। রাজ্য আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে দলের  ঐক্যবদ্ধ সমর্থনের অধিকারী হলেও তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।তবে মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা তাঁর ব্যক্তিত্ব, ক্ষমতা, বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি গুণগত যোগ্যতা প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল। আর সেই কারণে সংসদের শাসন ব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী অঙ্গরাজের শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব, কর্ম কুশলতা এবং জনমানসের শুভ ভাবমূর্তি উপরিউক্ত বিষয়গুলি নিরাময় হতে পারে।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল "SHESHER KOBITA SUNDORBON

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প