Skip to main content

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মূল ভাবনা বা বিদ্যাসাগরের প্রতি যে শ্রদ্ধার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তার পরিচয় দাও।

'' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মূল ভাবনা বা বিদ্যাসাগরের প্রতি যে শ্রদ্ধার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তার পরিচয় দাও।



আলোচনা শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে,কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত  '' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' কবিতায় বিদ্যাসাগরের প্রতি অসীম, অপরিমেয় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। কবি একদিকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সকল চারিত্রিক গুণগুলি প্রকাশ করেছেন , আবার অন্যদিকে ভারতের প্রতি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যে অপার ভালোবাসা,শ্রদ্ধা এবং অবদান - সে বিষয়েও দৃষ্টিপাত করেছেন।  আসলে কবি এখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে একই সঙ্গে বিদ্যার সাগর ও করুণার সাগর হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাই কবিকে বলতে শুনি- 

            '' বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।

              করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,

              দীন যে, দীনের বন্ধু!"


কবি বিদ্যাসাগরকে বিদ্যার সাগর ও করুনার সাগর হিসেবে তুলে ধরার পরই বিদ্যাসাগরকে '' দীনের বন্ধু '' বলে সম্বোধন করেছেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যাসাগরের চরিত্রের মহান গুণাবলি এই সনেটের মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন। তবে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সামগ্রিক জীবন আলোচনা বা পর্যালোচনা করলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারি যে, , তাঁর সমুদ্রের ন্যায় তুলনীয় জ্ঞান , দীন-দরিদ্রের প্রতি অপার করুণা , ক্ষমার আধার , অসীম মাতৃস্নেহ - ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলি তাঁর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে।আর সেই মহিমার সুফল পেয়েছে আপামর ভারতবাসী। আর সেখানে আমরা দেখি-

              পর্বত যেমন সূর্যের আলো গায়ে মেখে গলিত সোনার মত দ্যুতি বিকিরণ করে , আপন সৌন্দর্য দ্বারা মানবজাতিকে মোহাবিষ্ট করে ; তখন যে ব্যক্তি সেই পর্বতের সান্নিধ্যলাভ করে , কেবল সেই জানে - পর্বতের কী অসীম সৌন্দর্য , কী অসীম গাম্ভীর্য , কত গুনের অধিকারী ; ঠিক তেমনভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন - 

        "হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।'


সনেটটিতে কবি বিদ্যাসাগরকে হিমালয় পর্বতের বিশালতা ও ব্যাপকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। শুধু তাই নয়,হিমালয় পর্বতকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে তিনি বিদ্যাসাগরকে মহিমান্বিত চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর সেখানে হিমালয় যেমন তার সবকিছু দিয়ে মানব ও প্রকৃতির সেবা করে - তার নদী জল প্রদান করে , বৃক্ষরাজি সুস্বাদু ফল প্রদান করে , ফুলের তাদের দৈবিক সুগন্ধে প্রকৃতিকে মোহাচ্ছন্ন করে ঠিক তেমনি বিদ্যাসাগর নিজের সবটুকু দিয়ে মানব সমাজের সেবা করে চলেছেন নিরন্তর। সেই সাথে জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছেন। নারীশিক্ষার বিস্তার,  সামাজিক কুসংস্কার প্রতিরোধ, নিজের অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এরূপ নানান সেবায় নিয়োজিত করেছেন নিজেকে। তাই কবি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে  হিমালয় পর্বতের অপার মহিমার সঙ্গে তুলনা করেছেন।            

   

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গোটা বিশ্বজগতবাসীর কাছে আজ বিদ্যাসাগর জ্ঞানের অসীম আধার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে অন্যান্য মহামানবের গুণগুলি আছে , তা বিশ্বজগতের কাছে পরিচিত নয়। তাই কবি তাঁর সনেটে  বিদ্যাসাগরকে বহুমুখী মানবিক গুণগুলি অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয়,বিদ্যাসাগর সারা জীবন ধরেই জগতের আর্তের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। অসহায়কে সাহায্য করেছেন,দরিদ্রের মুখে অন্ন জুগিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে,এ কবির চরম দারিদ্রতা ও অসহায়তার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কৃপা ও সান্নিধ্যলাভ পেয়েছিলেন। আর এই সকল নানাবিধ কারণে কবি মধুসূদন দত্ত তাঁর বিদ্যাসাগর কবিতা নামক সনেটে বিদ্যাসাগরের চারিত্রিক সকল গুনাবলী পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।

Comments

Popular posts from this blog

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প