Skip to main content

শেষ ভালো যার সব ভালো তার'-নৈতিক বিচারের দিক থেকে এই নীতি কি সমর্থনযোগ্য? আলোচনা করো।

'শেষ ভালো যার সব ভালো তার'-নৈতিক বিচারের দিক থেকে এই নীতি কি সমর্থনযোগ্য? আলোচনা করো।


              • আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ঐচ্ছিক ক্রিয়া নৈতিক বিচারের বিষয়। আর এই ঐচ্ছিক ক্রিয়ার দৈহিক স্তর নৈতিক বিচারের বিষয় হতে পারে না। এই বিষয়ে সকল নীতিবিদ সহমত পোষণ করেন। যে সকল কাজের অভিপ্রায় ও ফলাফল ভালো সেই কাজ নৈতিক ভালো এবং উভয় যদি মন্দ হয় তবে সেই কাজ নৈতিক মন্দ। এই বিষয়টি প্রায় সব নীতিবিদ একমত পোষণ করে থাকেন। কিন্তু-

        যে সকল কাজের মানসিক স্তর উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় এবং ফলাফলের মধ্যে সংগতি থাকে না সেই ব্যাপারে ফলমুখী নীতিবিদ্যা ও কর্তব্যমুখী নীতিবিদ্যার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আর সেখানে-

         'শেষ (ফল) ভালো যার সব ভালো তার' অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় যাই হোক না কেন কোন বিশেষ কাজের ফল যদি ভালো(সুখকর) হয় বা বহুজন হিতায় হয় তবে সেই কাজটি নৈতিক ভালো এবং ফল যদি মন্দ হয় তবে সেই কাজ নৈতিক মন্দ। এই মতানুসারে নৈতিক বিচারের মানদন্ড হলো-

       ফলাফল ভালো = কাজটি নৈতিক ভালো।

        ফলাফল মন্দ।  =কাজটি নৈতিক মন্দ।

দার্শনিক মিল এবং দার্শনিক বেন্থাম এই মতবাদের সমর্থক। 'শেষ ভালো যার সব ভালো তার'। সুখবাদীদের এই মানদণ্ড নৈতিক দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয়। কিছু উদাহরণের সাহায্যে অতি সহজেই এই বিষয়টি আমরা আলোকপাত করতে পারি। আর সেই আলোকপাতে দেখি-

 •ক) ফল ভালো কিন্তু- 

         উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় মন্দঃ

এক ভিক্ষুক এক ভদ্রলোকের কাছে বারবার ভিক্ষা চাওয়ায় ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে ভিক্ষুকটিকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে দু-টাকার মুদ্রা ছুড়ে মারেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেন। ভিক্ষুক টাকা পেয়ে খুশি হয়ে সে স্থান ত্যাগ করলেন। এক্ষেত্রে ভদ্রলোকের কাজের ফল ভালো। কারণ তিনি বিজ্ঞপ্তিকে  সুখ উৎপাদন করতে সাহায্য করলেন। কিন্তু ভদ্রলোকের কাজটিকে কেউ নৈতিক ভালো কোন মতেই বলবেন না। 

খ) ফল মন্দ কিন্তু- 

     উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় ভালোঃ

এক অস্ত্র চিকিৎসক রোগীর প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করলেন। কিন্তু সেই রোগীটি মারা গেল। এখানে ফল-মন্দ হলেও ডাক্তারের কাজটিকে কেউ নৈতিক মন্দ বলবেন না।

•উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়   ফলাফল =   নৈতিক বিচার

    মন্দ              +       ভালো    = নৈতিক মন্দ কাজ

    ভালো           +    মন্দ          =নৈতিক ভালো কাজ।


           সুতরাং, ফলাফলের ভালো মন্দের উপর নৈতিক বিচার নির্ভর করে না। তাই 'শেষ ভাল যার সব ভালো তার'- সুখবাদীদের এই নীতি নৈতিক দিক থেকে সমর্থন যোগ্য নয়।



       


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...