Skip to main content

ভারতের সংবিধানের বর্ণিত সাম্যের অধিকার ( ১৪-১৮ নম্বর ধারা) আলোচনা করো।

ভারতের সংবিধানের বর্ণিত সাম্যের অধিকার ( ১৪-১৮ নম্বর ধারা) আলোচনা করো।


•ভূমিকাঃ আমরা জানি যে, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিস্বরূপ পরিগণিত হওয়া তিনটি আদর্শ হলো- সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতা। আর এই তিনটি ভিত্তি স্তম্ভের মধ্যে সাম্যের আদর্শ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এই তিনটি আদর্শই মানুষকে যুগে যুগে গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছে। ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে যে,সকল মানুষই সমানভাবে সৃষ্ট হয়েছে (All men are created equal)। এরই পরবর্তী সময়কালে অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে ফরাসি জাতীয় সংসদ ঘোষণা করে যে, প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে।আর সেই কারণে প্রত্যেকেই সমানাধিকার ভোগ করতে পারে। আসলে সাম্য ও স্বাধীনতা এর আদর্শ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সাম্য ছাড়া স্বাধীনতার ধারণা অর্থহীনতায় পর্যবসিত হয়। অধ্যাপক ল্যাক্সি প্রসঙ্গত বলেন যে-

      "সমাজে বিশেষ সুযোগ সুবিধার উপস্থিতি থাকলে জনগণের কোনরকম স্বাধীনতা থাকতে পারে না। বৈষম্যমূলক সমাজে সাম্যের নীতি যথার্থভাবে কার্যকর হতে পারে না।"


            •তাই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা ভীষণ প্রয়োজন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, ভারত যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেহেতু জাতি ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী, পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল ভারতীয় রাষ্ট্রৈর কাজ থেকে সমান সুযোগ সুবিধা পাবে। আর সেখানে১৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে-


•১) আইনের দৃষ্টিতে সাম্যঃ আইনের দৃষ্টিতে সাম্য কথাটির অর্থ হলো, সব নাগরিক আইনের চোখে সমান‌। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক প্রত্যেকে আইনের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সাধারণ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত। রাষ্ট্রের কাছে কেউ বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবে না প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ধারনাটি আইনের আধ্যাপক ডাইসির অনুশাসন তত্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত। তবে এর ব্যতিক্রম আছে-

      • রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল স্বপদে বহাল থাকাকালীন তাঁরা যে সকল কাজ করেন তার জন্য আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। এমনকি স্বপদে বহাল থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা করা যায় না। 

•২) আইনের দ্বারা সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকারঃ ভারতীয় সংবিধানে এখানে বলা হয় যে, সমপর্যায়ভুক্ত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে আইন সমভাবে প্রযুক্ত হবে। তবে ১৯৫০ সালে চিরঞ্জিত লাল চৌধুরী বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, অবস্থা বা প্রকৃতি অনুযায়ী প্রত্যেক আইনকে সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য করতে হবে। আর এই রায় অনুসারে রাষ্ট্র যুক্তিযুক্তভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে শ্রেণীবিভক্ত করতে পারে এবং পৃথক পৃথক শ্রেণীর উপর রাষ্ট্র পৃথক আইন প্রণয়ন করতে পারে।

•৩) ১৫ নম্বর ধারাঃ ভারতীয় সংবিধানে ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র কোন নাগরিকের প্রতি অর্থাৎ জাতি,ধর্ম,বর্ণ,লিঙ্গ,জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।

•৪) ১৬ নম্বর ধারাঃ সংবিধানের ১৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকারি চাকরিতে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের আছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র জাতি,ধর্ম,বর্ণ, লিঙ্গ,বংশ,জন্মস্থান ইত্যাদি বিষয়ে কোন নাগরিকের প্রতি কোনরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।

•৫) ১৭ নম্বর ধারাঃ ভারতীয় সংবিধানে ১৭ নম্বর ধারায় "অস্পৃশ্যতা"কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এখানে সংবিধানের এই নির্দেশকে বলবৎ করার জন্য ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে "অস্পৃশ্যতা সংক্রান্ত আইন" পাশ করা হয়েছে। এই আইন অনুসারে অস্পৃতার কারণে কোন ব্যক্তিকে অযোগ্য বলে কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে তা আইন অনুসারে দণ্ডনীয় হবে।

•৭) ১৮ নম্বর ধারাঃ ভারতীয় সংবিধানে ১৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, সামরিক অথবা শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বীকৃতি বিষয়ক উপাধি ছাড়া রাষ্ট্র কোন ব্যক্তিকে অন্য কোন উপাধি প্রদান করতে পারবে না। শুধু তাই নয়,এছাড়াও কোন ভারতীয় নাগরিক বিদেশী রাষ্ট্র থেকে কোন খেতাব বা উপাধি গ্রহণ করতে পারবে না।

             •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,ভারতীয় সংবিধানে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা আছে,আর সেখানে প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্র অনুন্নত নাগরিকদের জন্য কিছু সরকারি পদ বা চাকরি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র জনস্বার্থে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। যেমন-

            সরকার নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার গ্রহণ করতে পারে এবং সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত জনসাধারণ ব্যবহার্য উন্মুক্ত কূপ, জলাশয়, স্নানাগার, পথ ও জনসমাগমের স্থানে কোন ছোঁয়াচে রোগীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে এরই পাশাপাশি-

         সাংবিধানিকভাবে অস্পৃশ্যতা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও ভারতীয় সমাজ জীবন থেকে অস্পৃশ্যতাকে সম্পূর্ণভাবে দরীভূত করা যায়নি। তবুও আমরা বলতে পারি যে, ভারতীয় সংবিধানে ঘোষিত সাম্যের অধিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি  সঠিক পদক্ষেপ সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।


ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প