Skip to main content

ভারতীয় সংসদে সাধারণ বিল পাসের প্রক্রিয়া আলোচনা কর। অথবা ভারতের পার্লামেন্টের আইন পাশের পদ্ধতি আলোচনা করো।

ভারতীয় সংসদে সাধারণ বিল পাসের প্রক্রিয়া আলোচনা কর। অথবা ভারতের পার্লামেন্টের আইন পাশের পদ্ধতি আলোচনা করো।

 ভূমিকাঃআমরা জানি যে ,ভারতবর্ষ হলো পৃথিবীর 

              সর্ববৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর সেই রাষ্ট্রের সংবিধানে ১০৭-১২২ নম্বর ধারায় পার্লামেন্টের বিল পাশের বিষয়টি বা পদ্ধতিটি উল্লেখ আছে। এদিক থেকে তাই বলা হয়-ভারতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের বিষয়টি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। যেখানে পার্লামেন্টে কোন বিল পাশ করতে হলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি অতিক্রম করতে হয়। আর সেই তিনটি পদ্ধতি হলো-

      •বিলের প্রথম পাঠ (First reading)• 

•পার্লামেন্টে বিল পাশের প্রথম পাঠে বিলের উত্থাপক বিলটির নামকরণসহ বিলটি উত্থাপন করেন। উত্থাপন পর্বে বিলটির সম্বন্ধে কোন বিস্তারিত আলোচনা করা হয় না। এখানে কেবলমাত্র উত্থাপনকারী সদস্য বিলটির প্রয়োজনীয়তা বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে থাকেন। তবে নীতিগতভাবে সংসদের অধিকাংশ সদস্যের সমর্থন লাভ করলে বিলটি উত্থাপিত হয়েছে ও এর প্রথম পাঠ সমাপ্ত হয়েছে বলে ধরা হয়। অবশেষে নিয়ম অনুসারে বিলটিকে সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হয়।


     •বিলের দ্বিতীয় পাঠ (Second reading)•

 বিল পাশের দ্বিতীয় পর্বে সংসদে বিলটিকে নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হয়। এখানে বিলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য বিলের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়,এখানে বিল উত্থাপনকারী বলতে পারেন-

      •বিলটি আইনসভায় সরাসরি বিবেচিত হোক। 

      •বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। 

      •জনমত গ্রহণের জন্য বিলটি প্রচারিত হোক। 

      •বিলটিকে উভয় কক্ষের যুক্ত কমিটিতে 

       পাঠানো হোক। শুধু তাই নয়-

                 •বিল পাশের দ্বিতীয় পর্বে কমিটি বিল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করেন। আর সেখানে প্রচলিত কোন আইনের সাথে আলোচ্য বিলটির কোন মতবিরোধ আছে কিনা কমিটি তা বিচার বিবেচনা করে দেখেন। অতঃপর -

         •বিল উত্থাপনকারী কমিটি তাদের সুপারিশসহ একটি রিপোর্ট তৈরি করেন এবং বিলটিকে সভায় পুনরায় পেশ করেন। এখানে সভায় যেকোন সদস্য বিলটির ওপর সংশোধনী প্রস্তাব আনতে পারেন। অতঃপর বিলটি প্রতিটি ধারা সূক্ষ্মভাবে বিচার বিবেচনা করেন এবং ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হলে বিলটির দ্বিতীয় পাঠ সমাপ্ত হয়েছে বলে ধরা হয়।

       •বিলের তৃতীয় পাঠ (Third reading)•

পার্লামেন্টে উত্থাপিত বিলটি দ্বিতীয় পাঠ শেষ হলে বিলটিকে তৃতীয় পাঠের পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। আর সেখানে বিলটিকে সামগ্রিকভাবে বিচার বিবেচনা করা হয়। এখানে মৌলিক বা আনুষ্ঠানিক সংশোধনী প্রস্তাব ভিন্ন অন্য কোন সংশোধনের প্রস্তাব এই পর্যায়ে করা যায় না। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র শব্দগত সংশোধনের প্রস্তাব করা যায়। অতঃপর বিলটি ধ্বনিভোটে বা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিক্যে গৃহীত হওয়ার পর লোকসভার অধ্যক্ষ মহাশয় সেই বিলটির সাথে একটি শংসাপত্র যুক্ত করে দেন। অতঃপর-

       •বিলটি উত্থাপক কক্ষে অর্থাৎ লোকসভায় অনুমোদন লাভের পর অপর কক্ষে অর্থাৎ রাজ্যসভায় পাঠানো হয়। এখানেও উত্থাপক কক্ষের ন্যায় প্রতিটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে বিলটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। আর বিলটি এখানে অনুমোদন লাভ করলে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য বিলটি প্রেরণ করা হয়। আর রাষ্ট্রপতি সেই বিলটিতে স্বাক্ষর করলে তবেই সেটি আইনে পরিণত হয়।

         •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাষ্ট্রপতি অর্থবিল ছাড়া যেকোন সাধারণ বিলে সম্মতিদান করতে পারেন বা নাও করতে পারেন বা প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন। অথবা রাষ্ট্রপতি এই বিলটিকে পুনর্বিবেচনা জন্য অনুরোধ করে বিলটি ফেরৎ পাঠাতে পারেন। এখানে পার্লামেন্টের উভয় পক্ষ যদি বিলটিকে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধিত আকারে অনুমোদিত করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান, তখন রাষ্ট্রপতি সেই বিলে সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA" SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...