অর্থবিল কাকে বলে? ভারতীয় পার্লামেন্টে অর্থবিল পাসের পদ্ধতি আলোচনা করো।
অর্থবিলঃ ভারতীয় সংবিধানের ১১০ নম্বর ধারায় বলা
হয়েছে যে, ভারতের সঞ্চিত তহবিল বা আকস্মিক তহবিল থেকে অর্থবিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় কিংবা ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে জড়িত ও প্রাসঙ্গিক কোনো আর্থিক অঙ্গীকার ও নীতিকে অর্থবিল বলে। অর্থাৎ -
•যেকোন কর ধার্য, বিলোপ, পরিহার,পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ।
•ভারত সরকার কর্তৃক ঋণগ্রহণ যা কোন প্রতিশ্রুতি প্রদান নিয়ন্ত্রণ, বা ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত বা গৃহীত হবে এমন কোন আর্থিক দায়িত্ব সম্পর্কিত আইনের সংশোধন।
এরূপ আরো পাঁচটি বিষয় সংবিধানের ১১০ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে। তবে ১১০ নম্বর ধারায় উল্লেখিত বিষয়ের সম্পর্কিত বিল ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে বিল অর্থবিল হিসাবে পরিগণিত হয় না। আবার কোনবিল অর্থবিল কিনা সে বিষয়ে লোকসভার স্পিকার একটি সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকেন। সংবিধানের ১১০/৩ নম্বর ধারা অনুসারে অর্থবিল সংক্রান্ত বিষয় স্পিকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।
•অর্থবিল পাশের পদ্ধতি•
ভারতীয় সংবিধানে ১০৯ নম্বর ধারায় অর্থ বিল পাশের আলোচনা ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।সেখানে অর্থবিল পাসের পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। কেবলমাত্র অর্থমন্ত্রী বা ওই সংক্রান্ত ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী অর্থবিল আইনসভায় উত্থাপন করতে পারেন। তবে লোকসভায় বিভিন্ন পর্যায়ে এই অর্থবিলটি গৃহীত হয়। আর সেই পর্যায়ে গুলি হল-
•ক) লোকসভায় অর্থবিলঃ ভারতীয় সংবিধান
অনুসারে অর্থবিল কেবলমাত্র লোকসভায় উত্থাপন করা যায়। অর্থ সংক্রান্ত কোনো বিল রাজ্যসভায় উত্থাপন করা যায় না। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী বা অন্য কোন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে পূর্বানুমতি নিয়ে লোকসভায় অর্থবিল পেশ করতে পারেন। আর অর্থবিল পেশের পর লোকসভায় একটি নির্দিষ্ট দিনে এই বিলের শিরোনাম পাঠের সাথে সাথে অর্থবিলের প্রাথমিক পাঠ শেষ হয়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে, অর্থ বিলের প্রথম পাঠ শেষ হবার পর অন্যান্য সরকারি বিলের মত অর্থবিলকেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাঠের স্তর অতিক্রম করতে হয়। সেখানে এই বিলের তৃতীয় পাঠ শেষ হলে অধ্যক্ষের শংসাপত্র সহ বিলটিকে রাজ্যসভায় প্রেরণ করা হয়।
•খ) রাজ্যসভায় অর্থবিল প্রেরণঃ ভারতীয়
সংবিধানের রীতি অনুসারে লোকসভায় কোন অর্থবিল গৃহীত হওয়ার পর সেই বিলটিকে সুপারিশের জন্য রাজ্যসভায় প্রেরণ করা হয়। এখানে রাজ্যসভা বিলটিতে সংশোধন করার প্রস্তাব দিতে পারেন। তবে রাজ্যসভা এই অর্থবিল পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যেই লোকসভার কাছে রাজ্যসভার সুপারিশ পাঠাতে হয়।
•গ) রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রদানঃ ভারতীয় সংবিধান
অনুসারে রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত কোন অর্থবিল কোন মতেই আইনে পরিণত হতে পারে না। তাই সংবিধান অনুসারে সংসদ কর্তৃক অর্থবিল গৃহীত হওয়ার পর অধ্যক্ষের শংসাপত্র সহ বিলটিকে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে যেহেতু রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতির নিয়ে বিলটি সংসদে আলোচিত হয় এবং গৃহীত হয় তাই তিনি এই অর্থবিলে ১১১ নম্বর ধারা অনুসারে সম্মতি দিতে বাধ্য। আর রাষ্ট্রপতি সম্মতি প্রদান করার পর এই বিলটি আইনে পরিণত হয়।
• উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা একথা বলতে পারি যে, অর্থ বিল পাসের ক্ষেত্রে লোকসভার বিশেষ প্রাধান্য পরিলক্ষিত। কারণ অর্থমন্ত্রী বা লোকসভার অন্য কোন মন্ত্রী কেবলমাত্র এই অর্থবিল লোকসভায় উত্থাপন করতে পারেন। আর যেহেতু মন্ত্রীরাই এই বিল উত্থাপন করতে পারেন সেহেতু মন্ত্রী পরিষদ পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে থাকেন।আর এই মন্ত্রিপরিষদ এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্য। যার ফলে অর্থবিল সংক্রান্ত লোকসভার এই প্রাধান্য অতি গণতন্ত্র সম্মত বলা যেতেই পারে।
Comments
Post a Comment