Skip to main content

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।


•ভূমিকাঃ রাজ্যপাল এবং মন্ত্রিসভা কে নিয়ে ভারতে অঙ্গরাজ্য সমূহের শাসন বিভাগ গঠিত হয়। তবে তত্ত্বগতভাবে অঙ্গরাজ্যের শাসন বিভাগীয় প্রধান রাজ্যপাল। আর এই রাজ্যপালের নামেই রাজ্য সরকারের যাবতীয় কার্য পরিচালিত হয়। অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল সাধারণভাবে ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। এই রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে মোটামুটি পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। আর সেই ক্ষমতা ও কার্যাবলী গুলি হল-

                •১)শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ

 সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের শাসন ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত হয়েছে। সাধারণভাবে বিধানসভা নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দলের নেতা বা নেত্রীকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ ক্রমে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ দপ্তর বন্টন ও শপথ বাক্য পাঠক্রমে দায়িত্ব রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত। সংবিধানের ৩৫৬ নম্বর ধারা অনুসারে রাজ্যপাল কোন রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করলে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জরুরি অবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করতে পারেন।

                   •২) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ 

রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় রাজ্যপাল হলেন রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তিনি আইনসভার অধিবেশন আহ্বান, অধিবেশন স্থগিত,এবং প্রয়োজনে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের সুপারিশ করতে পারেন। তবে রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া বিধানসভায় পাশ হওয়া কোন বিল আইনের পরিণত হতে পারে না। এছাড়াও রাজ্য আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন । আর এই অর্ডিন্যান্স আইনসভা প্রণীত আইনের মতই কার্যকরী হয়।

                 •৩) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ 

রাজ্যপাল যে সকল অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা ভোগ করেন সেগুলি হল যে, রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইন সভায় কোন দাবী ভোগ করা বা কোনো অর্থবিল উত্থাপন করা যায় না। এছাড়াও রাজ্যপালের হাতে রাষ্ট্রের আকস্মিক তহবিলের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। যেকোনো জরুরি অবস্থার মোকাবিলার জন্য এই তহবিল থেকে রাজ্যপাল অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে পারেন। 

               •৪) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ

 ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালের হাতে কিছু কিছু বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। আর এই সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করে থাকেন। এছাড়াও দেওয়ানি আদালতের বিচারপতি, অতিরিক্ত জেলা জজ,দায়রা জজ প্রমুখদের রাজ্যপাল নিয়োগ,বদলি ও পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। পাশাপাশি অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তির অপরাধের শাস্তি হ্রাস বা স্থগিত রাখা বা ক্ষমা করার ক্ষমতা রাজ্যপালের আছে।

               •৫) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাঃ 

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা,শাসন সংক্রান্ত, অর্থ সংক্রান্ত, বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার ছাড়াও রাজ্যপালের হাতে আরও কতকগুলি বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আর সেই সকল ক্ষমতাগুলিকে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলা হয়। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার পরামর্শ ছাড়াই স্বাধীনভাবে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।যে ক্ষমতা ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

                          •পদমর্যাদাঃ 

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ভারতবর্ষের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে রাজ্যপাল কতদূর তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন সে সম্পর্কে মতবিরোধের অবকাশ রয়েছে। তবে সংবিধান রচয়িতাগণ রাজ্যপালের পদটিকে নিয়মতান্ত্রিক স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার পরিপেক্ষিতে তাঁকে প্রকৃত শাসক হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। বাস্তবিক ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে রাজ্য মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে কাজ করতে হয়। আবার-

             কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যপাল ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। তবুও রাজ্যপাল যদি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা রীতিনীতি মেনে এবং রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন তাহলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে রাজ্যপালের মর্যাদা সুফল দান করতে পারে বলে মনে করা হয়।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন "SHESHER KOBITA SUNDORBON" YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প