চৈতন্যদেবের গয়া গমনের ইতিবৃত্ত এবং ঈশ্বরপরীর সাক্ষাৎ এর ঘটনাটি আলোকপাত করো।
বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থের আদি খন্ডে চৈতন্যদেবের গয়া গমন এবং ঈশ্বর পুরীর সাক্ষাতের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। যেখানে এই চৈতন্য ভাগবত এর আদি খন্ডে ১৫টি অধ্যায় আছে। আর সেই পনেরটি অধ্যায়ের মধ্যে সর্বশেষ অধ্যায় হল পঞ্চদশ অধ্যায়। আর সেখানেই নিমাই পন্ডিতের গয়া গমন এবং সেখানে ঈশ্বরপুরীর সাক্ষাতের বিষয়টি আমরা দেখতে পাই। যেখানে-
চৈতন্যদেব মাত্র ১৬/১৭ বছর বয়সে তাঁর একদল ছাত্রদের সাথে নিয়ে গয়া গমন করেন। আর সেখানেই বৈষ্ণব সন্ন্যাসী এবং বিখ্যাত মাধবেন্দ্র পুরীর শিষ্য ঈশ্বরপুরীর কাছ থেকে তাঁর আধ্যাত্মিক দীক্ষা নেন। আর এই ঈশ্বরপুরীর সাথে তার প্রথম দেখা হয় গয়ায় পিতৃপিন্ড দান করতে গিয়ে । এখানে ঈশ্বরপুরী মহাপ্রভুকে দশাক্ষরের গোপালমন্ত্রে দীক্ষা দেন।তবে-
নদিয়ায় প্রত্যাবর্তনের পর, নিমাই পন্ডিত একজন ধর্মপ্রচারক হয়ে ওঠেন এবং তার ধর্মীয় প্রকৃতি এতটাই উপস্থাপন করা হয়েছিল যে অবদ্বৈত প্রভু, শ্রীবাস এবং অন্যান্য যারা চৈতন্য জন্মের আগে ইতিমধ্যে বৈষ্ণব বিশ্বাস গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা যুবকের ভয়ানক পরিবর্তনে বিস্মিত হয়েছিলেন।
এই সময়কালে নিমাই একজন কেবল সমালোচক বক্তা ছিলেন না,তিনি ছিলেন একজন স্মার্ট ঝগড়াবাজ। বলা যায় এই সময়কালে নিমাই কৃষ্ণের নামে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। তাঁর ধর্মীয় অনুভূতির প্রভাবে একজন অনুপ্রাণিত মানুষ হিসেবে আচরণ করেছিলেন। আর সেই ঘটনা একজন প্রত্যক্ষদর্শী মুরারি গুপ্ত বর্ণনা করেছেন এইভাবে-
"তিনি শ্রীবাস পণ্ডিতের বাড়িতে তার স্বর্গীয়
ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন তার শত শত
অনুসারীর উপস্থিতি যারা বেশিরভাগই
সুগঠিত পন্ডিত ছিলেন।"
শুধু তাই নয়, এই সময়ে তিনি তাঁর আন্তরিক অনুগামীদের নিয়ে শ্রীবাস পন্ডিতের প্রাঙ্গনে কীর্তনের একটি নিশাচর বিদ্যালয় খোলেন। সেখানে তিনি প্রচার করেছেন, সেখানে তিনি গান করেছেন সেখানে তিনি নৃত্য করেছেন আবার সেখানে তিনি সমস্ত ধরনের ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। আসলে-
নিত্যানন্দ প্রভু যিনি তখন বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি তখন সমগ্র ভারত ভ্রমণ শেষ করেছিলেন। ততক্ষণে তাঁর সাথে যোগ দিয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে, হৃদয়ে আন্তরিক বৌষ্ণব ধর্মের পন্ডিত প্রচারক একটি দল, বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে তাঁর সাথে যোগ দেন।নদীয়া এখন বৈষ্ণব আচার্যদের একটি নিয়মিত আসর হয়ে উঠেছে। সেদিন সেই সকল প্রশ্ন আচার্যদেরলক্ষ্য ছিল বৈষ্ণব ধর্মের সর্বোচ্চ প্রভাব দিয়ে মানবজাতিকে আধ্যাত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ করা।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য ভাগবতের পঞ্চদশ অধ্যায়ে চৈতন্যদেবের জীবনের যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই, তার প্রধান কারণ সাথীদের নিয়ে গয়া গমন। আর এই গয়া গমনের কারণ ছিল-
পিতৃদেবের পিণ্ডদান। যদি চৈতন্যদেব পিন্ডদান করতে গয়ায় না আসতেন তাহলে ঈশ্বরপুরীর সাথে তার সাক্ষাৎ হতো কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে সন্দেহ যাই থাকুক না কেন,এই ঈশ্বরপুরী তাঁর জীবন সাধনা, বৈষ্ণব সাধনা, বৈষ্ণব ধর্মের সাধনা বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
Comments
Post a Comment