Skip to main content

চার্বাকগণ অনুমানকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেননি কেন? চার্বাকদের যুক্তিগুলি আলোচনা ও বিচার করো।

চার্বাকগণ অনুমানকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেননি কেন? চার্বাকদের যুক্তিগুলি আলোচনা ও বিচার করো।•অথবা.                                                            "অনুমান প্রমাণ নয়"- চার্বাকদের এই মন্তব্য ব্যাখ্যা ও বিচার করো  (প্রথম সেমিস্টার NEP).                    •অথবা                                                             অনুমান প্রমাণ খণ্ডের জন্য চার্বাকরা কোন কোন চুক্তি দিয়েছেন? তা ব্যাখ্যা ও বিচার করো।


ভূমিকাঃ চার্বাক মতে জ্ঞানের একমাত্র উৎস প্রত্যক্ষ। প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। আর প্রত্যক্ষলব্ধ জ্ঞান নির্ভরযোগ্য। অনুমান ও শব্দ প্রমাণ রূপে গ্ৰাহ্য নয়। চার্বাক দর্শনের প্রমাণ শাস্ত্রীয় এই মতবাদটি আধ্যাত্মিকতার বিরোধিতার একটি বিরাট অস্ত্র। তবে যাঁরা অধ্যাত্মবাদী তাঁরা এমন কতগুলি পদার্থ স্বীকার করেন যা কখনোই প্রত্যক্ষগোচর নয়। এই সকল অতীন্দ্রিয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানের উৎস হচ্ছে প্রত্যক্ষ ভিন্ন অন্য প্রমাণ। তবে-

          চার্বাক দর্শনের সাথে প্রত্যক্ষ প্রমাণবাদীতা অগ্রাঙ্গিকভাবে জড়িত। আর সেই প্রমাণসমূহ ভারতীয় দর্শনে প্রত্যক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর সেখানে চার্বাকরা প্রত্যক্ষের সঙ্গেই প্রমাণগুলির যোগ স্বীকার করেছেন। চার্বাক দর্শন সাধারণত জড়বাদী দর্শন হিসেবে পরিচিত। তাই তারা প্রত্যক্ষকে একমাত্র প্রমাণগুলোর স্বীকার করার পর অনুমানের প্রামাণ্য খন্ডন করার জন্য বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেছেন। আর সেই যুক্তিগুলি হলো-

•প্রথমতঃ চার্বাক মতে অনুমান হল অপত্যক্ষের জ্ঞান। আসলে এই অনুমান হলো প্রত্যক্ষ বিষয় থেকে এবং প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে অপ্রত্যক্ষ বিষয়ের জ্ঞান। তবে যা অপ্রত্যক্ষ তাই অপ্রমাণ। সুতরাং অনুমান প্রমাণ নয়।

•দ্বিতীয়তঃ চার্বাকেরা বলেন অনুমানে ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে। আর সেখানে অনুমান হল পরোক্ষ বা অন্য নির্ভর জ্ঞান। যেখানে ইন্দ্রিয়ের সাথে বিষয়ের সাক্ষাৎ সংযোগের সুযোগ নেই। কাজেই অনুমানলব্ধ জ্ঞানের লোক ব্যবহার থাকলেও এর মধ্যে সংশয় ও বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

•তৃতীয়তঃ চার্বাকরা বলেন অনুমানের ভিত্তি হল ব্যাপ্তি জ্ঞান। অনুমানে প্রত্যক্ষ থেকে অপ্রত্যক্ষে যাওয়া যায়। আর এই যাওয়া সম্ভব হয় ব্যপ্তিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। সুতরাং ব্যাপ্তি-জ্ঞান অনুমানের ভিত্তি। কিন্তু ব্যাপ্তি-জ্ঞান সম্ভব নয়। কারণ--

•ক) ব্যাপ্তি হলো নিয়ত সহচার সম্পর্ক এবং এই সম্পর্ক প্রত্যক্ষ গ্রাহ্য নয়। আসলে ব্যাপ্তি হলো দুটি বিষয়ে (ধুম ও অগ্নির) নিয়ত সম্পর্কের জ্ঞান। এক্ষেত্রে সর্বকালের, সর্বদেশের, সমস্ত ধূমের মধ্যে অগ্নির প্রত্যক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়।। সুতরাং ব্যাপ্তি জ্ঞান অসম্ভব।

•খ) ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠা তর্কের দ্বারা সম্ভব নয়। আবার তর্কের মাধ্যমে ব্যাপ্তি জ্ঞান প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কারণ তর্কের গতি সর্বদাই অপ্রত্যক্ষ বিষয়ের দিকে। তাই তর্কের ক্ষেত্রে অপ্রত্যক্ষ বিষয়কে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়। আর সেখানে প্রত্যক্ষের কোন ভূমিকা তর্কে থাকে না।

•গ) ব্যাপ্তি হলো ব্যতিক্রমহীন সম্পর্ক এবং ব্যতিক্রমহীনতার সার্বিক প্রত্যক্ষ সম্ভব নয। ব্যাপ্তি হলো দুটি বিষয়ের (ধুম ও অগ্নির) ব্যতিক্রমহীন সম্পর্কের জ্ঞান। এখানে ধুম ও অগ্নির ব্যতিক্রমহীন সম্পর্ক নির্ণয় করতে গেলে নিশ্চিত হতে হবে যে, "ধুম আছে অথচ অগ্নি নেই"-এমন অবস্থা হতে পারে না। কিন্তু এটি প্রত্যক্ষের মাধ্যমে হওয়া সম্ভব। কাজেই ব্যতিক্রমহীন সার্বিক প্রত্যক্ষের জ্ঞান অসম্ভব।


                 •বিচার/সমালোচনা• 

চার্বাক ব্যতীত অন্যান্য ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায় দেখেছেন যে অনুমান প্রমাণ অবশ্যস্বীকার্য। তাই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেই সকল দার্শনিক সম্প্রদায়ের যুক্তিগুলি হল--

•প্রথমতঃ অনুমান লব্ধজ্ঞান কখনও কখনও ভ্রান্ত হয়ে থাকে।আর এই যুক্তিতে অনুমানকে অস্বীকার করলে প্রত্যক্ষ প্রমাণকেও অস্বীকার করতে হয়। কারণ প্রত্যক্ষ জ্ঞানও কখনও কখনও ভ্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন- রজ্জুতে সর্প দর্শন।

•দ্বিতীয়তঃ কোন কোন ক্ষেত্রে অনুমানলব্ধ জ্ঞান ভ্রান্ত হয় বলে চার্বাকরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, অনুমান লব্ধ জ্ঞান সর্বক্ষেত্রেই ভ্রান্ত। কিন্তু চার্বাকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন অনুমানের সাহায্যে। সুতরাং অনুমান প্রমাণ অবশ্যস্বীকার্য।

    পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, অনুমান লৌকিক জীবনযাত্রায় জ্ঞানলাভের অন্যতম উপায় হিসেবে স্বীকৃত। আর এই বাস্তব সত্য পরবর্তীকালে সুশিক্ষিত চার্বাকরা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তাঁরা অর্থাৎ সঙশিক্ষিত চার্বাকরা অনুমানকে প্রমাণ করে স্বীকার করেছিলেন।তবে ঈশ্বর,আত্মা প্রভৃতি অলৌকিক তত্ত্ব ব্যাখ্যার জন্য অনুমানের ব্যবহার তাঁরা অনুমোদন করেননি।


(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের- 

    SHESHER KOBITA SUNDARBAN YouTube Channel এ ।)

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প