Skip to main content

ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো।

ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আলোচনা করো।


ভূমিকাঃ আমরা জানি যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে একটি কেন্দ্রীয় আইনসভা আছে। আর সেই কেন্দ্রীয় আইনসভা পার্লামেন্ট নামে পরিচিত। রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভা ও লোকসভা নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছে। এই পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ- উচ্চ কক্ষ অর্থাৎ রাজ্যসভা, নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভা। পার্লামেন্টের এই রাজ্যসভা ও লোকসভার মধ্যে যে সাংবিধানিক সম্পর্ক আছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

     লোকসভা ও রাজ্যসভা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোকসভা রাজ্যসভার তুলনায় বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভা লোকসভা তুলনায় বেশি ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। 


        •রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা•


•১) সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। উভয় কক্ষের সম্মতি ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় না।

২) রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ও পদচ্যুতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। 

•৩) পার্লামেন্টকে অবমাননার জন্য সদস্য বা সদস্যা নয় এমন ব্যক্তিকে শাস্তি দেবার ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।

•৪) জরুরি অবস্থা অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। 


•লোকসভা রাজ্যসভার তুলনায় বেশি ক্ষমতা ভোগ করে যেসকল ক্ষেত্রে-


•ক) সাধারণ বিলঃ সাধারণ বিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে লোকসভা ও রাজ্যসভা সমান ক্ষমতা করলেও বাস্তবে কিন্তু সাধারণ বিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার তুলনায় লোকসভার ক্ষমতা অনেক বেশি। কারণ-

           কোন সাধারণ বিল নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে সেই বিরোধ মীমাংসার জন্য যৌথ অধিবেশন ডাকা হয়। এই যৌথ অধিবেশনের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে বিলের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। লোকসভার সদস্য সংখ্যা যেহেতু রাজ্যসভা তুলনায় বেশি সেহেতু লোকসভার মতামতই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।


•খ) অর্থবিলঃ অর্থবিল প্রথম লোকসভাতেই উত্থাপন করা হয়, রাজ্যসভাতে নয়। কোন বিল অর্থ বিল কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয় লোকসভার স্পিকারকে। অর্থবিল লোকসভায় অনুমোদিত হওয়ার পরই রাজ্যসভায় যায়। রাজ্যসভা বিলটি অনুমোদন করুক বা না করুক ১৪ দিন পর বিলটি উভয় কক্ষের অনুমোদন লাভ করেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। 


•গ) শাসন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণঃ শাসন বিভাগকে একমাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে লোকসভা, রাজ্যসভা নয়। কেন্দ্রের শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের উপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার স্থায়িত্ব নির্ভর করে। লোকসভায় মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। লোকসভার দৃষ্টি আকর্ষণ প্রস্তাব, মুলতুবি প্রস্তাব, নিন্দা সূচক প্রস্তাব প্রভৃতি উত্থাপন করে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। 


•রাজ্যসভা লোকসভার তুলনায় বেশি ক্ষমতা ভোগ করে যেসব ক্ষেত্রে-


•ক) রাজ্য আইনঃ সংবিধানের বিষয় ২৪৯ নম্বর ধারা অনুসারে রাজ্যসভা জাতীয় স্বার্থে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। লোকসভায় এ ব্যাপারে কোন ক্ষমতা নেই। 


•খ) সর্বভারতীয় চাকরিঃ রাজ্যসভা জাতীয় স্বার্থে এক বা একাধিক সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টি করতে পারে। লোকসভার এ ব্যাপারে কোন ক্ষমতা নেই। 


•গ) উপরাষ্ট্রপতি পদচ্যুতিঃ উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি সংক্রান্ত প্রস্তাব শুধুমাত্র রাজ্যসভাতে উত্থাপন করা যায়, লোকসভাতে নয়। 


     পরিশেষে আমরা বলতে পারি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ কথা অতি স্পষ্ট যে, রাজ্যসভা লোকসভার তুলনায় অনেক বেশি দুর্বল। অবশ্য যেকোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। শাসন, আইন, অর্থ প্রভৃতি ক্ষেত্রে লোকসভা রাজ্যসভার তুলনায় অনেক উচ্চে অবস্থান করে। তাই বিভিন্ন সময়ে রাজ্যসভা অবলুপ্তির জন্য দাবি উঠে আসে। তবে ভারতের মতো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজ্যসভার প্রয়োজনীয়তা কোনভাবেই হ্রাস হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ১৯৯৯ সালে বিহারে রাবড়ি দেবী মন্ত্রিসভা পুনঃ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা ছিল অতি প্রশংসনীয়।


ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON"             YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...