ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা করো । অথবা- ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রবণতা আলোচনা করো
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা করো ।
অথবা-
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রবণতা আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ স্বাধীন ভারতের সংবিধানে ১ নম্বর ধারায় ভারতবর্ষকে একটি রাজ্য, সংঘ বা রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন বলে বর্ণনা করা হয়েছে (India that is Bharat, shall be a union of States)। আসলে সেদিন সংবিধান প্রণেতারা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, ভারতে অঙ্গরাজ্যগুলির ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন অধিকার নেই। আর সে কারণেই আমরা সংবিধানে দেখতে পাই-
•কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতা বন্টনের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পার্লামেন্ট সমগ্র ভারতবর্ষ এবং এর যে কোন অংশের জন্য ও রাজ্য আইনসভা সমগ্র রাজ্য বা তার কোনো অংশের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারবে। এরই পাশাপাশি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংবিধানের প্রাধান্য,নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের অস্তিত্ব এবং দুই প্রকার সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা। আর সেখানে-
••ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্র প্রবণতা••
•ক) আইনগত ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রাধান্যঃ
•১) আইনগত ক্ষেত্রে ক্ষমতা বন্টনের তালিকা লক্ষ্য করা যায়, সেখানে দেখা যায় যে, অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই কেন্দ্রীয় আইনসভার আইন প্রণয়নের অধিকার আছে।
•২) কানাডার সংবিধানের অনুসরণে ভারতীয় শাসনতন্ত্রে অবশিষ্ট ক্ষমতা (কেন্দ্রীয় রাজ্য ও যুগ্ম তালিকা বহির্ভূত বিষয়) পার্লামেন্টের হাতে দেওয়া হয়েছে।
•৩) যুগ্ম তালিকাভুক্ত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দিলে কেন্দ্রীয় আইনই প্রাধান্য পাবে।
•খ) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রধান্য•
•২) ভারতীয় সংবিধানের ২৫৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের শাসন ক্ষমতা পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতিতেই প্রয়োগ করা হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগ রাজ্য সরকারকে যথাযথ নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।
•২) আন্তঃরাজ্য নদী ও নদী উপত্যকাগুলি নিয়ে বিরোধ বাধলে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে সেই বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারে।
•৩) বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে শাসনকার্যে সংহতি বিধানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করতে পারেন।
•গ) আর্থিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য•
•১) অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর গুলির ওপর কেন্দ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠিত।আর সেখানে আয়কর, উত্তরাধিকার কর প্রভৃতি কেন্দ্রীয় সরকার ধার্য করে এবং সংগ্রহ করে।
•২) রাষ্ট্রপতির দেশে বা তার কোন অংশেই আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে আর্থিক ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার গুলিকে নির্দেশ প্রদান করতে পারে।
•৩) রাজ্যগুলোকে অনুদান(Grant-in-aid) মঞ্জুরীর ক্ষমতা কেন্দ্রের। অনুদানের প্রয়োজনীয়তা ও পরিমাণ পার্লামেন্টই স্থির করে করে থাকে।
•ঘ) দ্বি-নাগরিকত্ব নীতি অনুপস্থিতি•
যুক্তরাষ্ট্রে দ্বি-নাগরিত্ব নীতির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ভারতে দ্বি-নাগরিত্ব নীতি দেখতে পাওয়া যায় না। এখানে প্রত্যেকেই ভারতের নাগরিক। অঙ্গরাজ্যের নাগরিকত্ব এখানে প্রদান করা হয় না।
•পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের জন্য একটি নিজস্ব সংবিধান থাকে। কিন্তু ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য গুলির নিজস্ব কোন সংবিধান নেই। এখানে সমগ্র দেশের জন্য একটি মাত্র সংবিধান আছে এবং তা হল ভারতের সংবিধান। সুতারাং আমরা বলতে পারি যে, ভারতের শাসন ব্যবস্থা আকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় হলেও প্রকৃতিতে এককেন্দ্রিক।
Comments
Post a Comment