Skip to main content

ব্রিটিশ (3rd.Sem)পার্লামেন্টের বিরোধী পক্ষের ভূমিকা আলোচনা করো।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিরোধী পক্ষের ভূমিকা আলোচনা করো(West Bengal State University, 3rd Semester, Political Science, Minor Syllabus)

ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্রিটেন সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত থাকায় সেখানে একাধিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রতিটি দলই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। নির্বাচনের যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তাদের সরকারি দল এবং অন্যদের বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্রিটেনে অনেকগুলি দলের অস্তিত্ব থাকলেও সাধারণত সেখানে দুটি প্রধান দলের মধ্যে নির্বাচন দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ থাকে। আর সেই দুটি দল হল-Conservative Party এবং Labour Party। ব্রিটেনে শাসন ব্যবস্থায় বিরোধী দল যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমরা সেগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করতে পারি-

১) সরকারকে সংযত থাকতে বাধ্য করেঃ ব্রিটিশ গণতন্ত্রের ইমারত জনসম্মতির উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে বলে অনেকে দাবি করেন। কিন্তু বাস্তবে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় একবার সরকার গঠিত হলে পরবর্তী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তাদের কিছুই করার থাকে না। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল যেকোনো সময় জনস্বার্থ উপেক্ষা করে স্বৈরাচারী হয়ে ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে। সরকারের যেকোনো নীতি, যে কোন প্রস্তাব বা যেকোনো কার্যক্রম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা এবং সেগুলোর ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো বিরোধী দলের প্রধান কাজ। এক কথায় বিরোধীদল সরকারকে সংযত থেকে যাবতীয় কার্য সম্পাদনে বাধ্য করে।

•২) জনমত গঠন করাঃ ব্রিটেনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার দখল করা হলো বিরোধী দলের প্রধান উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যকে তারা দুইভাবে পূরণ করার চেষ্টা করে থাকে-

ক) যে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে কমন্সসভার ভোটাভুটিতে সরকারি পক্ষকে পরাজিত করে। 

খ) পরাজিত করে নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যম।

           এই উদ্দেশ্যে বিরোধী দল পার্লামেন্টের অধিবেশনে সরকারি কাজকর্মের সমালোচনা মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের নিজেদের অনুকূলে মত প্রকাশের প্রচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, তারা সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি গুলি জনসমক্ষে তুলে ধরে জনমত গঠন করার চেষ্টা করে থাকে।

•৩) গঠনমূলক সমালোচনায় অংশগ্রহণঃ ব্রিটেনে বিরোধী দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সরকারের সমালোচনা করা। তবে এই সমালোচনা অবশ্যই আনুগত্যপূর্ণ, গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল হয়। আনুগত্যপূর্ণ এই জন্য যে তারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে সমালোচনা করা, এই সমালোচনা কখনো অসাংবিধানিক ভাবে নয়। অর্থাৎ তাদের সমালোচনা গঠনমূলক , কারণ তাদের সমালোচনায় সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে বিরোধী দলকে সরকার গঠনে প্রস্তুত থাকতে হয়। আর যে কর্মসূচি ভিত্তিতে সরকারের সমালোচনা করে, ভবিষ্যতের সরকার গঠনের দায়িত্ব পেলে সেই কর্মসূচি বাস্তব রূপদান করতে হয়। বিরোধী দলের পক্ষে সমালোচনা হয় বাস্তব ভিত্তিক ও দায়িত্বশীল। 

•৪) সরকারের সাথে সহযোগিতা করাঃ সংসদীয় গণতন্ত্রকে সফল করে তুলতে হলে সরকারি ও বিরোধীদলের মধ্যে বোঝাপড়া ও সহনশীলতার মনোভাব থাকা একান্ত প্রয়োজন। আর এই বোঝাপড়া ও সহনশীলতার বিষয়টি ব্রিটেনে একান্ত ভাবে লক্ষ্যণীয়। সেখানে বিরোধী দল যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সরকার গঠনের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়, ঠিক তেমনি সরকারি দলও বিরোধী দলের সমালোচনা করার অধিকারকে স্বীকার করে নেয়। আর তার ফলে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে।

•৫) স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে কাজ করাঃ ব্রিটিশ জনগণের কাছে সেদেশের বিরোধী দল স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে থাকে। বিরোধী দলের ওপর বাধা নিষেধ আরোপ করাকে ইংল্যান্ডের জনসাধারণ তাদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে ধরে নেয়। বিরোধী দল সরকারের স্বৈরাচারী কাজকর্মের বাধা সৃষ্টি করে স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করে। তাই ব্রিটেনে বিরোধী দলের মর্যাদা সু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় সে দেশে বিরোধীদলের অর্থ হল রাজা বা রানীর বিরোধী দল।

           • পরিশেষে বলা যায় যে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে তর্ক ও বিতর্ক চরম পর্যায়ে গিয়েও কোন সময়ই শাসনকার্যের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় না। তার কারণ হলো উভয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা বোঝাপড়ার সম্পর্ক। আসলে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণ হলো ব্রিটেনের দুটি দলই বিদ্যমান শ্রেণী সম্পর্কের প্রতি পরিপূর্ণভাবে সহানুভূতিশীল।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...