Skip to main content

প্রশ্নঃ নাগরিক ও বিদেশের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর

 প্রশ্নঃ নাগরিক ও বিদেশীর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।


নাগরিকঃআমরা নাগরিক বলতে জানি যে, নাগরিক হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি অধিকার এবং দায়িত্ব সহ একটি দেশের আইনী সদস্য। 

বিদেশীঃ বিদেশী হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোনো স্থান বা সম্প্রদায়ের নন। অন্য কথায়, একজন বিদেশী এমন একটি দেশের অপরিচিত ব্যক্তি যেটি সে নয়।

             নাগরিক ও বিদেশীর মধ্যে পার্থক্যঃ-

নাগরিক ও বিদেশীদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক।আর সেই  তথ্য বিশ্লেষণে নাগরিক ও বিদেশিদের মধ্যে পার্থক্য হলো--

প্রথমতঃ নাগরিকরা সেই রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা যারা রাষ্ট্রের আইন ও নিয়ম মেনে চলার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাদের রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকত্বের অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভোটদান, নির্বাচিত হওয়া, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা ইত্যাদি। কিন্তু --

             বিদেশীরা হলো সেই ব্যক্তি, যারা অন্য কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক। তারা সেই রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারে, কিন্তু তাদের সেই রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের অধিকার থাকে না।

দ্বিতীয়তঃ নাগরিকদের নিজ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা আবশ্যিক কর্তব্য।কিন্তু--

        বিদেশীদের বিদেশে বসবাসকালীন সেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক নয়। 

        আমরা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি যে,আমেরিকার একজন নাগরিক অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাস করলেও বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদান করে না। বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনে চললেও সে তার নিজ রাষ্ট্র আমেরিকার প্রতিই আনুগত্য প্রদান করে।

তৃতীয়তঃ রাষ্ট্র একজন নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আদেশ দিতে পারে। কিন্তু --

            একজন বিদেশীকে রাষ্ট্র কখনও সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বা যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য করতে পারে না।

চতুর্থতঃ নাগরিক রাষ্ট্রপ্রদত্ত সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে। কিন্তু --

          বিদেশী কেবলমাত্র সামাজিক অধিকার ভোগ করে।

পঞ্চমতঃ একজন নাগরিক নিজ রাষ্ট্রে ও অন্য রাষ্ট্রে বসবাসকালীন নিজ রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা লাভের অধিকারী। কিন্তু --

     বিদেশী হিসেবেও বসবাসরত রাষ্ট্রের নিকট থেকে সে নিরাপত্তা লাভ করে পারে। তবে একজন বিদেশী বসবাসকারী রাষ্ট্রে অবস্থানকালীন সে রাষ্ট্রের নিকট থেকে নিরাপত্তা লাভ করলেও অন্যরাষ্ট্রে অবস্থানকালে বসবাসকারী রাষ্ট্র থেকে নিরাপত্তা লাভ করে না।

     উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে,একজন নেপালী বাংলাদেশে বসবাসরত অবস্থায় ভারতে গিয়ে বিপদে পড়লে সে বাংলাদেশের নিকট সাহায্য চাইতে পারবে না।

ষষ্ঠতঃ সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন কোন নাগরিককে যখন তখন বা কোন কোন সময়ে তাকে থানায় যেতে বাধ্য করা যায় না। কিন্তু --

        বিদেশীদের উপর কখনও কখনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যেমন− বিদেশীকে কোন কোন সময় থানায় নাম রেজিস্ট্রি করতে হয়।

সপ্তমতঃ রাষ্ট্র তার যে-কোনাে নাগরিককে কোনাে গুরুতর অপরাধের জন্য দেশের আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। কিন্তু --

       রাষ্ট্র কোন বিদেশীকে গুরুতর অপরাধের জন্য চূড়ান্ত শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হয়।

 অষ্টমতঃ রাষ্ট্র কোনাে নাগরিককে গুপ্তচরবৃত্তি বা অসদাচরণের অপরাধে রাষ্ট্র বহিষ্কার করতে পারে না। কিন্তু --

 কোন বিদেশী যদি গুপ্তচরবৃত্তি বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অসদাচরণ অপরাধ করে তাহলে রাষ্ট্র তাকে বহিষ্কার করতে পারে।

নবমতঃ রাষ্ট্র জরুরীকালীন পরিস্থিতি ছাড়া অন্যসময়ে নাগরিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সাধারণত করে না। কিন্তু--

    শুধুমাত্র জরুরীকালীন অবস্থা নয়, সাধারণ অবস্থাতেও রাষ্ট্র বিদেশিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে।

দশমতঃ রাষ্ট্রীয় সকল প্রথা, রীতি নীতি, আইন মেনে কোন নাগরিক যদি বিদেশে যায় তাহলে তার প্রতিও রাষ্ট্রের কিছু কর্তব্য থেকে যায়। কিন্তু--

          কোনাে বিদেশি যখন আশ্রয়দাতা রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে, তখন তার প্রতি আর কোনােরকম কর্তব্য রাষ্ট্রের থাকে না।


পরবর্তী প্রশ্ন *জাতি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য * জানার জন্য আমাদের এই পেজটি অবশ্যই লাইক এবং কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন। এছাড়াও আরো অনেক শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় জানতে visit করুন "SHESHER KOBITA SUNDARBAN" YouTube channel.


Comments

Popular posts from this blog

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...