Skip to main content

স্মৃতি কাকে বলে? স্মৃতির উপাদান গুলি কি কি বিশদে আলোচনা করো।

 স্মৃতি কাকে বলে? স্মৃতির উপাদান গুলি কি কি বিশদে আলোচনা করো।(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার NEP, শিক্ষা বিজ্ঞান।)


স্মৃতিঃ

  আমরা জানি যে ,স্মৃতি হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়া। তাই অতীত অভিজ্ঞতার যথাসম্ভব অবিকল পুনরুদ্রেক করার ক্ষমতাকেই স্মৃতি বলে। এই স্মৃতিকে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মনোবিদরা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর সেই সকল মনোবিদদের মধ্যে অন্যতম হলেন উডওয়ার্থ। তিনি বলেন-

     "যে মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা পূর্বে শেখা কোন   

      কাজ একইভাবে পরবর্তীকালে সম্পাদন করা

     যায়, তাই হল স্মরণ বা স্মৃতি।"

       মোট কথা হলো, কোন বিষয় শিখনের সময় বা কোন অভিজ্ঞতা অর্জনের সময় বিষয় বা পরিস্থিতি ব্যক্তির সামনে না থাকলেও সে সম্পর্কে চিন্তা করা যায়। বিষয়টি একটি ছবি ব্যক্তির মনের মধ্যে থাকে যা ইন্দ্রিয়াতীত বিষয়টি সম্পর্কে চিন্তা করতে সাহায্য করে। বিষয়টির এই মানস ছবিকে বলা হয় প্রতিরূপ। প্রতিরূপের মাধ্যমে অতীতের বিষয়কে মনের চেতন স্তরে অবিকল একইভাবে পুনঃরুজ্জীবিত করাই হল স্মরণ বা স্মৃতি।


স্মৃতির উপাদানগুলি আলোচনা করো।

          কোন বিষয় শেখার পর বিষয়টি পরবর্তীকালে পুনরাবৃত্তি করা পর্যন্ত যে মানসিক প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের একত্রে বলা হয় স্বরণ। কোন বিষয়ের স্মরণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অভিজ্ঞতার সঞ্চায়ন ও শিখন। আবার প্রয়োজনের সময় সঞ্চিত অভিজ্ঞতা কে পুনরুত্থান করতে হয়। আর এই দৃষ্টিতে স্মৃতির উপাদান গুলি হল-

            ১) শিখন ।

            ২) সংরক্ষণ ।

            ৩)পুনরুদ্রেক এবং 

             ৪) প্রত্যাভিজ্ঞা।


১)  শিখনঃ 

          স্মৃতির প্রথম উপধান উপাদান হলো শিখন কোন বিষয় যদি আমরা পূর্বে না শুনে বা না দেখে বা শিখে থাকি তাহলে তাকে স্মরণ করার কোন প্রশ্নই আসে না। কোন কিছুর স্মরণ করতে হলে তাকে আগে মনের মধ্যে লিপিবদ্ধ করতে হবে। অর্থাৎ সেই বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। যেমন-    

       ভারতীয় সংবিধানের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে স্মরণ করতে গেলে আমাদের অবশ্যই ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান থাকা দরকার।


২) সংরক্ষণঃ

              যখন আমরা মন দিয়ে কোন বিষয়ে বারবার শেখার চেষ্টা করি, তখন বিষয়টি আমাদের মনে সংরক্ষিত হয়। বিষয়টি তখন চেতন মনের স্তর থেকে অবচেতন মনে চলে যায়। এই অতীত অভিজ্ঞতা গুলি মনের মধ্যে কত রূপের আকারের সংরক্ষিত হয়। পরবর্তীকালে উপযুক্ত উদ্দীপকের প্রভাবে ওই প্রতিরূপ গুলি পুনরায় চেতন মনে ফিরে এসে স্মৃতি ঘটে।


৩) পুনরুদ্রেকঃ

               স্মৃতির অতীত উপাদান হলো পুনরুদ্রেক। মনে সংরক্ষিত প্রতিরূপগুলিকে ব্যক্ত করার মানসিক ক্রিয়াই হলো পুনরুদ্রেক। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে পুনরায় মনে করার প্রক্রিয়াই হল পুনরুদ্রেক। যথাযথভাবে পুনরুদ্রেক করার অর্থ হলো ঘটনাটিকে অপরিবর্তিত রেখে তার প্রতিরূপগুলিকে একইভাবে পুনরুদ্রেক করা। অনুষঙ্গের কারণেই অতীত অভিজ্ঞতার পুনরুদ্রেক সম্ভব হয়।


৪) প্রত্যভিজ্ঞাঃ

               প্রত্যভিজ্ঞা কথাটির অর্থ হলো পুনরায় চেনা বা জানা। পূর্বজ্ঞাত বিষয়কে চিনতে পারা কে বলা হয় প্রত্যভিজ্ঞা। যেমন-

        পথের মাঝে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা হলো, পরে মনে হল ছেলেটি আমার কলেজের সহপাঠী। এই যে ছেলেটিকে চিনতে পারলাম আমার সহপাঠী বলে একেই বলা হয় প্রত্যভিজ্ঞা। আসলেই প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিত বোধ বা চেতনা, যার অভাব ঘটলে স্মরণ ক্রিয়া সুনির্দিষ্ট হয় না। তাই প্রত্যভিজ্ঞা হল স্মরণ ক্রিয়ার শেষ ধাপ।

     পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত উপাদানগুলির সম্মিলিত রূপই হল স্মৃতি। এর মধ্যে কোন একটি অভাব ঘটলে স্মরণ ক্রিয়া সম্পন্ন হতে সমস্যা দেখা দেয়। তাই শিখন, সংরক্ষণ, পুনরুদ্রেক ও প্রত্যভিজ্ঞার মিথস্ক্রিয়াইস্মৃতির মূল কারণ। তবে অতীত অভিজ্ঞতার পুনরুত্থান নির্ভর করে অনেক সময় ব্যক্তির মনোভাব ও আবেগের উপর।


Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প