ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত নির্দেশমূলক নীতিগুলির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করো।(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)।
ভূমিকাঃ
আলোচনা শুরুতেই বলা যায় যে,ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত নির্দেশমূলক নীতিগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হওয়ার ফলে বাস্তবে এগুলি নৈতিক উপদেশ বা রাজনৈতিক ইস্তেহারে পরিণত হয়েছে। তবে এই নীতিগুলি একেবারেই মূল্যহীন নয়। কারণ এই নীতিগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হয়েও এর গুরুত্ব বা তাৎপর্যকে সরাসরি অস্বীকার বা উপেক্ষা করা যায় না। তাই এই নির্দেশ মূলক নীতিগুলি বেশ তাৎপর্য বা গুরুত্ব আছে বলে মনে করা হয়। আর সেই গুরুত্ব গুলি হলো-
১) রাজনৈতিক তাৎপর্যঃ
নির্দেশমূলক নীতিগুলি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সমতা আনার মাধ্যমে ভারতীয় গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে। তাই এই নীতিগুলি সমাজ বিপ্লবকে লক্ষ্য রেখে তা বাস্তবে রূপায়িত করার সহায়ক বলা হয়। আসলে এইসব নীতি ভারতের সমাজ জীবন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক চিন্তাকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করেছে।
২) সাংবিধানিক গুরুত্বঃ
ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যের শাসনব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা কেন্দ্রের দায়িত্ব। আর সে কারণে নির্দেশমূলক নীতিগুলি সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্য গুলিকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কিনা তা লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে অর্পিত হয়েছে। এই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার গুলিকে নির্দেশমূলক নীতিগুলি কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। এখানে কোন রাজ্য সরকার এই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে রাষ্ট্রপতি সেই রাজ্য সরকারকে শাস্তি দিতে পারেন। অর্থাৎ সংবিধানের গণ্ডির মধ্যেই নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে কার্যকর করার ব্যবস্থা নিহিত রয়েছে।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য নোটসের আলোচনা, ভিডিও ও সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON" ইউটিউব চ্যানেলে, ধন্যবাদ 🙏)
৩) আইনগত গুরুত্বঃ
নির্দেশমূলক নীতিগুলি যেহেতু আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয় সেহেতু এই নীতির কোন আইনগত তাৎপর্য নেই বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে যে ,বিহার বনাম কামেশ্বর সিং মামলা, কুরেশী বনাম বিহার রাজ্য মামলা, বালসারা বনাম বোম্বাই রাজ্য মামলা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশমূলক নীতি গুলির ভিত্তিতেই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করেছেন। সুতরাং নির্দেশ মূলক নীতিগুলির যে আইনগত গুরুত্ব আছে তা ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয় স্বীকার করে নিয়েছে।
৪) নৈতিক গুরুত্বঃ
ভারতীয় দলীয় শাসন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণপন্থী বা বামপন্থী বা মধ্যপন্থী দল শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে।আর যে দলই ক্ষমতাসীন হোক না কেন অর্থনৈতিক, সামাজিক বা আন্তর্জাতিক বিষয়ের সরকারের কতকগুলি কর্তব্য থাকে। আর নির্দেশমূলক নীতিগুলি সরকারকে সেইসব নৈতিক কর্তব্য পালনের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
৫) সামাজিক তাৎপর্যঃ
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন যে, জনসাধারণকে তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও শিক্ষিত করে গড়ে তোলার দিক থেকে নির্দেশমূলক নীতিগুলির যথেষ্ট ভূমিকা আছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় সাম্য,স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা সৃষ্টির মতো আদর্শের কথা বলা হয়েছে। আর সেগুলি নির্দেশমূলক নীতির যে শিক্ষাগত মূল্য তার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়ে ওঠে।
৬) শিক্ষাগত মূল্যঃ
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার যে সংকল্প ঘোষিত হয়েছে, নির্দেশমূলক নীতির ক্ষেত্রেও সেই আদর্শগুলিকে প্রতিফলিত করা হয়েছে। আর এইসব আদর্শ প্রাচীন হলেও এগুলি প্রস্তাবনা বা নির্দেশমূলক নীতিতে সংযোজনের প্রধান উদ্দেশ্যেই হল জনগণকে তাদের অধিকার বা কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করে দেওয়া। আর এই দিক থেকে নির্দশাত্মক নীতিগুলির যে শিক্ষাগত মূল্য আছে তা অনস্বীকার্য।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে নির্দেশমূলক নীতিগুলি মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার এক প্রচেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। ঘোষিত নির্দেশ নীতিগুলির বিভিন্ন সময়ের বাস্তবায়ন যেমন- গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পত্তন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা, কুঠির শিল্প নির্মাণ, জাতীয় গ্ৰামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিয়তা সহ বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের মধ্য দিয়ে নির্দেশমূলক নীতির আসল লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত এই নীতিগুলি আদালত কর্তৃক অবলবৎযোগ্য হওয়ায় নিছক নৈতিক উপদেশ রূপেই পরিগণিত হয়েছে। তবুও রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর উন্নয়নকল্পে নির্দেশমূলক নীতিগুলির তাৎপর্য কে অস্বীকার করা যায় না।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য নোটসের আলোচনা, ভিডিও ও সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDORBON" ইউটিউব চ্যানেলে, ধন্যবাদ 🙏)
Comments
Post a Comment