Skip to main content

কার্যকরণের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ আছে/ কারন ও কার্যের সম্পর্ক আবশ্যিক বা অবশ্যম্ভব যুক্তিসহ আলোচনা করো।

কার্যকরণের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ আছে/ কারন ও কার্যের সম্পর্ক আবশ্যিক বা অবশ্যম্ভব যুক্তিসহ আলোচনা করো।


ভূমিকাঃ কার্যকারণ সম্বন্ধে আবশ্যিক সম্বন্ধবাদ বা অবশ্যসম্ভব্য মতবাদ বা প্রসক্তি সম্বন্ধ মতবাদের প্রবক্তা হলেন বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ। আর তাদের মতে-

        বুদ্ধিবাদী দার্শনিকরা মনে করেন যে, কার্য-কারণের মধ্যে অবশ্যম্ভব সম্বন্ধ বর্তমান। আর লৌকিক মতবাদ অনুযায়ী আমরা জানি যে, কারণ ঘটলে কার্য ঘটতে বাধ্য। কারণ এটি একটি শক্তি, যা কার্যকে উৎপন্ন করে থাকে। কারণ হলো কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা এবং কার্য কারণের অনুবর্তী ঘটনা। আর সেখানে-

১) কারণ ও কার্যের মধ্যে অনিবার্য সম্বন্ধ আছেঃ

           বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ অনিবার্য বা আবশ্যিক সম্মন্ধবাদের প্রধান প্রবক্তা। আর তাদের মতে, কার্যকর্মের মধ্যে অনিবার্য সম্বন্ধ বর্তমান। অর্থাৎ কারণ ঘটলে কার্য না ঘটে পারে না, কারণ ঘটলে কার্য অবশ্যই ঘটবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়-

    বিষপানে মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ বিষপান করলে মৃত্যুর না হতে পারে না, বিষপান করলেই মৃত্যু অনিবার্য। বুদ্ধিবাদীরা শিকার করেন যে কার্য-কারণের সম্বন্ধকে আবশ্যিকভাবে মেনে নিয়েই মানুষ জগত ও জীবনের সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণাকে গঠন করে থাকে।

২) কার্য-কারণের সম্বন্ধে হল প্রসক্তি সদৃশ সম্বন্ধেঃ

              বুদ্ধিমত্তা বলেন যে, কার্য-কারণের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধে আছে। এই সম্বন্ধ হল অনিবার্য বা আবশ্যিক সম্বন্ধ। বৈধ অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে যে সম্বন্ধ স্থাপিত হয়, কার্য ও কারণের মধ্যেও সেই ধরনের সম্পর্ক আছে। আসলে তাদের মতে এটু বাক্য ও সিদ্ধান্তের সম্পর্কই হলো প্রসক্তির সম্বন্ধে। যেমন-

              সকল ছাত্র হয় মানুষ 

              রাম হয় একজন ছাত্র 

  সুতরাং রাম হয় একজন মানুষ।

এই যুক্তি বাক্যটি সর্বদাই বৈধ যুক্তি। এখানে হেতুবাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্তও সত্য হবে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত কখনোই মিথ্যা হতে পারে না।

৩) আবশ্যিকতা অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল নয়ঃ

              বৈধ অবরোহ যুক্তিটির ক্ষেত্রে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে যে আবশ্যিকতার সম্পর্ক তা সর্বদা যুক্তির নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কার্যকারণের সম্বন্ধকে যৌক্তিক অনিবার্যতাও বলা হয়। কারণ বৈদ্য যুক্তির ক্ষেত্রে এতবাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্ত সত্য না হয়ে পারে না। বৈদ্য চুক্তির সর্বদাই অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।

৪) কারণ একটি শক্তি বিশেষ যা কার্যকে উৎপন্ন করেঃ

          বুদ্ধিবাদী দার্শনিকরা মনে করেন, কারণ হলো একটি শক্তি যা কার্যকে উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।  উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-

          বিষপান করলে মৃত্যু অনিবার্য। অর্থাৎ বিষপান কারণ এবং মৃত্যু হল কার্য। তাই বুদ্ধিবাদী দার্শনিকরা মনে করেন, বিষ পান করলে ওর মধ্যে যে শক্তি আছে তার ফলেই মৃত্যু ঘটে থাকে। তবে দার্শনিক লক অভিজ্ঞতাবাদী হওয়া সত্বেও বলেন, কারণ হলো কার্য ঘটানোর শক্তি। কারণ এর মধ্যে যে শক্তিটি নিহিত আছে তার ফলেই অনিবার্যভাবে কার্যটি ঘটে থাকে।আর সে কারণে-

      বুদ্ধিবাদীরা মনে করেন, কার্যকারণের মধ্যে প্রসক্তির সম্বন্ধ অবশ্যই আছে, যেটিকে অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বুদ্ধিবাদে অভিজ্ঞতার কোন মূল্য নেই। তা সত্ত্বেও বুদ্ধিবাদীরা স্বীকার করেন কার্য-৩কারণের সম্বন্ধ হল প্রসক্তি সম্বন্ধ।


কার্য-কারণ সম্বন্ধের সমালোচনা 

১) কারণ ও কার্য দুটি ভিন্ন ঘটনা,সেহেতু একটি অপরটির অংশ হতে পারে না। বিশ্লেষণাত্মক বচনগুলিই সার্বিক সত্যতা দাবি করতে পারে। যেহেতু কারণ কে বিশ্লেষণ করলে কার্যের ধারণা পাওয়া যায় না, সেহেতু কার্য ও কারণ মধ্যে কোন অনিবার্য সম্পর্ক নেই। 

২) কারণ ও কার্যের মধ্যে আমরা কোন বৌদ্ধিক সম্পর্ক আছে কিনা তা জানতে পারি না। 

৩) অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে কার্য-কারণ সম্পর্ক সঠিক ও অনিবার্য সম্বন্ধ নয়। তাদের মতে কি বাহ্যপ্রত্যক্ষ কী অন্তঃপ্রত্যক্ষ  কোনটির সাহায্যেই সিদ্ধান্ত করা চলে না যে, কার্যকারণ সম্বন্ধ অনিবার্য সম্বন্ধ। হিউমের মতে, কারণ ও কার্যের সম্বন্ধে অভিজ্ঞতাজাত। এই সম্বন্ধ মানসিক অভ্যাসজাত। কিন্তু এই সম্বন্ধে অনিবার্য সম্বন্ধ নয়।

৪) সাধারণত দুটি বাক্যের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধে থাকতে পারে বলে সকলেই স্বীকার করলেও দুটি ঘটনার মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধে থাকতে পারে কিনা তা বিতর্কের বিষয। কার্য ও কারণ এর মধ্যে যে প্রসক্তি সম্বন্ধের কথা বলা হয় তা ইন্দ্রিয় অনুভবের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। আসলে প্রসক্তিবাদীরা কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রসিক্তসদৃশ্য কোন সম্বন্ধ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এরূপ সম্বন্ধের যথার্থ কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেন না।

     পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উপরে উক্ত অভিযোগ গুলির মধ্যে কিছু সত্যতা স্বীকার করে নিলেও এ কথা আমাদের মানতেই হয় যে, অনিবার্য সংযোগ মতবাদ জগত ও জীবন বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ। বৌদ্ধিক সম্বন্ধ অভিজ্ঞতা দেখা যায় না বলেই এর অস্তিত্ব নেই এ ধরনের চুক্তি কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ ও কার্যের মধ্যে অবশ্যম্ভব্য সম্বন্ধের অনুসন্ধান করতে হলে যুক্তি বা প্রজ্ঞার উপরে নির্ভর করতে হবে।

             ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল 

       "SHESHER KOBITA SUNDORBON"

                YOUTUBE CHANNEL ।



             

         

Comments

Popular posts from this blog

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course)

 জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ(Rationalism)আলোচনা করো। (For BA. Second Semester & Higher Secondary Course) ভুমিকাঃ আমরা জানি জ্ঞানের উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে পাশ্চাত্য দর্শনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরস্পর বিরোধী মতবাদ দেখা যায়। আর এই দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের মধ্যে একটি অন্যতম মতবাদ হলো বুদ্ধিবাদ বা প্রজ্ঞাবাদ। আর সেই বুদ্ধিবাদ অনুসারে-        আমরা জানি পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে বুদ্ধিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন দার্শনিক ডেকার্ট। আর এই দার্শনিক ডেকার্টকে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক বলা হয়। তবে তার পরবর্তী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হিসেবে স্পিনোজা, লাইবনিজ এবং কান্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে জ্ঞান উৎপত্তিতে-- ডেকার্ট এর অভিমতঃ            দার্শনিক ডেকার্ট এর মতে দর্শনচিন্তার প্রথম সূত্র হলো সংশয় বা সন্দেহ। আর এই সংশয় নিয়েই দর্শন আলোচনা শুরু হয় এবং সুশৃংখল সংশয়-পদ্ধতির মাধ্যমে সংসায়াতীত, স্বতঃপ্রমাণিত ও সার্বিক মূল সত্যে পৌঁছানো যাবে। এই মূল সত্য থেকে গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে এবং তা অবশ্যই নির্মূল ও নির্ভরযোগ্য হবে। আর গণিতের অভ্রান্ততা এবং নিশ্চয়তাকে

ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা

 ব্যাপ্তি কাকে বলে? ব্যাপ্তি কয় প্রকার ও কি কি? ব্যাপ্তিজ্ঞান লাভের উপায়/ব্যাপ্তিগ্রহের উপায় গুলি আলোচনা করো। ব্যাপ্তি:- ন্যায় দর্শনমতে ব্যাপ্তি জ্ঞান হলো অনুমিতির অপরিহার্য শর্ত। ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অনুমিতির জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি। এই সাহচর্য নিয়ম হলো ব্যাপ্তি।                 এখানে সাহচর্য কথাটির অর্থ হলো সমনাধিকরণ। অর্থাৎ যেখানে যেখানে ধূম থাকবে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকবে। আর নিয়ম কথাটির অর্থ হলো নিয়ত বা ব্যতিক্রমহীনতা। সুতরাং সাহচর্য নিয়ম কথাটির মানে হল ব্যতিক্রমহীন সাহচর্য। আর সেখানে ধুম ও বহ্নির অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের সাহচর্য নিয়মই হল ব্যাপ্তি।    ব্যাপ্তি দুই প্রকার।         ১) সমব্যাপ্তি           ২) বিষমব্যাপ্তি। ১। সমব্যাপ্তিঃ               সমব্যাপক দুটি পদের ব্যাপ্তিকে সমব্যাপ্তি বলা হয়। এখানে ব্যাপক ও ব্যাপ্য-র বিস্তৃতি সমান হয়। যেমন, যার উৎপত্তি আছে, তার বিনাশ আছে। উৎপত্তি হওয়া বস্তু ও বিনাশ হওয়া বস্তুর বিস্তৃতি সমান। উৎপত্তিশীল ও বিনাশশীল সমব্যাপ্তি বিশিষ্ট। ২। বিষমব্যাপ্তি/অসমব্যাপ্তি :-             অসমব্যাপক দুটির প

তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস ছোট প্রশ্নোত্তর।

 ১) কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? উত্তর-কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সুলতান মহম্মদ ঘুরির দাস ও সেনাপতি ছিলেন। তিনি দিল্লীর প্রথম তুর্কি সুলতান ছিলেন। তাঁর শাসনের শুরুর সাথে ভারতের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ২) নব্য মুসলমান কারা ছিলেন? কে তাদের দমন করেছিলেন? উত্তর - জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজির আমলে হলান্ড বা আব্দুল্লা খানের নেতৃত্বে মোঘল আক্রমণ সংঘটিত হয় । তার আক্রমণ জালাল উদ্দিন কর্তৃক প্রতিহত হয় । সেই সময় কিছু বন্দি মঙ্গল জালাল উদ্দিনের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে । ধর্মান্তরিত হতে হবে এই শর্তে জালাল উদ্দিন তাদের আবেদনের সাড়া দেন। তারা এতে সম্মত হয় ।এই ধর্মান্তরিত মোঙ্গলেরা নব্য মুসলমান নামে পরিচিত। নব্য মুসলমানরা আলাউদ্দিনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে সেই আলাউদ্দিন এর আদেশে একদিনে ৩০ হাজার নব্য মুসলমানকে হত্যা করে অর্থাৎ আলাউদ্দিন নব্য মুসলমানদের দমন করে। ৩) মালিক কাফুর দ্বারা বিজিত দাক্ষিণাত্যের দুটি রাজ্যের নাম করো। উত্তর - মালিক কাফুর ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিনের একজন দক্ষ সেনাপতি । তাঁর দ্বারা দক্ষিণ ভারতের বিজিত রাজ্য দুটি হল দেবগিরি এবং বরঙ্গল। ৪) পাইবস ও সিজদা কি? উত্তর - পাইবস হল সম্রাটের প